সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের কঠোর অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশকে ১২ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
Advertisement
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ত্রাস নির্মূলে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার পর নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য কংগ্রেসের কাছে বাংলাদেশের তহবিল বরাদ্দ চেয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে তালিকাভুক্তি না করে আগামী ২০১৯ অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের বরাদ্দ হচ্ছে ২১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পরে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় তহবিল বাংলাদেশের জন্যই বরাদ্দ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার কংগ্রেশনাল শুনানির পর দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সিনিয়র কর্মকর্তা অ্যালিস জি. ওয়েলস সংবাদকর্মীদের এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতির উন্নয়ন, সন্ত্রাস দমন, আইন-শৃঙ্খলার সামর্থ্য ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য এই সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাব কমিটির শুনানিতে ওয়েলস বলেন, ‘আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার বাজেটে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার দাবি করে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তা গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং সফলতার উদাহরণ।’
Advertisement
ওয়েলস জানান, নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান তাৎপর্যপূর্ণ এবং বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক উৎখাতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সহযোগিতার মূল লক্ষ্য সহিংস চরমপন্থার বিস্তার ঠেকানো এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সামর্থ্য বাড়ানো।’
শুনানিতে ওয়েলস জানান, মিয়ানমার থেকে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এই শরণার্থীরা এখন নতুন ঝুঁকির মুখে, বর্ষায় বন্যা ও মানবিক সহযোগিতার ঘাটতি রয়েছে। ইউএসএআইডির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় সম্ভাব্য সবকিছু করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ সহযোগিতা বার্ষিক বাজেটের অপেক্ষায় থাকতে পারে না। ২০১৭ অর্থবছর থেকে এই মানবিক সহযোগিতার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে ১৯০ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতা দিয়েছে। বাংলাদেশে ভোক্তার বাজার তৈরি হচ্ছে এবং টানা ১০ বছর ধরে ছয় শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, উল্লেখ করে ওয়েলস জানান বাংলাদেশের সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ খাতের সামর্থ্য বাড়াতে চায় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায়। এজন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা চাইছে বাংলাদেশ।
Advertisement
ওয়েলস জানান, বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানিকারী দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ও দেশটির ক্রেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। শীর্ষ মার্কিন ক্রেতা ওয়ালমার্ট ও দ্য গ্যাপ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক কিনেছে।
তিনি বলেন, ‘কারখানার নিরাপত্তা মান বাড়ানো, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত এবং শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য আমরা বাংলাদেশে প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ ইউএসএআইডি’র এশিয়া ব্যুরোর সিনিয়র ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর গ্লোরিয়া স্টিল শুনানিতে জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জবাবদিহিতা, গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষ রাখা এবং নির্বাচনে যাতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে কাজ করছে।
গ্লোরিয়া আরও জানান, বিপুল জনসংখ্যা, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং দ্রুত বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির কারণে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের বাজারের জন্য বড় ধরনের সুযোগ।
ইউএসএআইডি’র কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, যদিও বিনিয়োগের স্বল্পতা রয়েছে এবং শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি যোগ্যতা অর্জন করেছে দেশটি। কিন্তু এই সফলতা অব্যাহত রাখতে অনেক কিছু প্রয়োজন। বাংলাদেশ যাতে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল থাকে, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এমআরএম