‘আকাশ তো মেঘলা, ঝির ঝির বৃষ্টিও ঝরছে। এ অবস্থায় রেডমুন কি দেখতে পারব বাবা।’ শুক্রবার রাত ১০টায় রাজধানীর লালবাগ এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালামের ১৩ বছর বয়সী স্কুল পড়ুয়া কিশোর ছেলে সানোয়ার হোসেন তার বাবার কাছে এভাবেই জানতে চায় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ (রেডমুন) আদৌ দেখতে পারবে কিনা।
Advertisement
আবদুস সালাম নিজেও সপরিবারে রেডমুন দেখবেন ভেবেছিলেন। আর তাই তিনি আবহাওয়া অধিদফতরের আগারগাঁও অফিসে টেলিফোন করে জনৈক মো. আবুল কালাম আজাদ নামে কর্তব্যরত একজনের কাছে রেডমুন দেখা যাবে কি না তা জানতে চাইলেন।
জবাবে আবহাওয়া কর্মকর্তা জানালেন, আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে রেডমুন দেখা যাবে। তবে এ মুহূর্তে দেশের দু-একটি অঞ্চল ছাড়া সারাদেশ মেঘাচ্ছন্ন। এ রকম মেঘাচ্ছন্ন থাকলে রেডমুন দেখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে আশার কথা হলো রাত সাড়ে ১১টা থেকে একুশ শতকের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। ভোর ৫টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে। রাত ২টায় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন শুনে রেডমুন দেখার আশা ছেড়ে দিয়ে কিশোর ছেলেকে ঘুমাতে যেতে পরামর্শ দিয়ে বাবা বলেন, রাতে আকাশ পরিষ্কার হলে ডেকে রেডমুন দেখাবেন। রেডমুন দেখার আশায় শুধু আবদুস সালাম ও তার ছেলের মতো রাজধানীসহ সারাদেশের অনেকেই আশা করেছিলেন। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওযায় তারা অনেকেই আশাহত হয়েছেন। তবে কেউ কেউ ভোর ৫টা পর্যন্ত জেগে থাকার ইচ্ছার কথাও জানান।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে একই সরলরেখায় চলে এলে গ্রহণ হয়। এ সময় পৃথিবী যদি চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে থাকে, তখন চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। একে বলা হয় চন্দ্রগ্রহণ। চন্দ্রগ্রহণের সময় আলো-আঁধারিতে ঢাকা থাকে চাঁদ।
Advertisement
তারা জানান, পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী থেকে চাঁদকে দেখায় গাঢ় কমলা বা লাল রঙের। এ কারণে চাঁদের এ অবস্থাকে বলা হয় ‘ব্লাডমুন’।
জানা গেছে, রেডমুন দেখতে ঢাকার বিজ্ঞান জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য নিয়মিতভাবে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ দেখার আয়োজন করা হয়। আজ রাতও সাড়ে ১০টা থেকে জাদুঘর উন্মুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। চন্দ্রগ্রহণ উপলক্ষে থাকবে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ও সেমিনার। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে গ্রহণ দেখারও আয়োজন থাকছে।
এর আগে ২০০০ সালের ১৬ জুলাই ১০৬ মিনিট স্থায়ী চন্দ্রগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। আর পরবর্তী পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণটি দেখা যাবে ২০২৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর। তবে সেটা এবারের মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে হবে না। আর ১০৩ মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী চন্দ্রগ্রহণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২১২৩ সাল পর্যন্ত।
এমইউ/জেডএ/এমআরএম
Advertisement