রাজধানীর বাজারগুলোতে আবারও বেড়েছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহে ৯৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে এখন ১০৫ টাকা ছাড়িয়েছে। অথচ গত রোজায়ও এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়।
Advertisement
দফায় দফায় দাম বেড়ে ডিম এখন অনেকটাই নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। বাজারে কারও নজরদারি না থাকার কারণে ডিমের দাম এমন দফায় দফায় বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার পর ডিমের চাহিদা খুব বেড়েছে। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে। বাজারে ডিমের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, খামারিরা সে পরিমাণ ডিম সরবরাহ করতে পারছেন না।
এদিকে ডিমের পাশাপাশি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে লাল লেয়ার মুরগির দাম। রোজার সময় ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগির দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই শ’ টাকায়।
Advertisement
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম ৩ দফা বেড়েছে। আর রোজার পর কমপক্ষে পাঁচ দফা বেড়েছে ডিমের দাম। অথচ রোজার সময় ডিমের দাম কয়েক দফা কমে গিয়েছিল। তবে ঈদের পর থেকেই অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে ডিমের দাম।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধ ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহ আগেও এসব ব্যবসায়ীরা ডিমের ডজন বিক্রি করেছেন ৯৫ টাকা। আর রোজার সময় বিক্রি করেছেন ৭০ টাকা ডজন।
খুচরা পর্যায়ে মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকায়। আর হালি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা। এসব ব্যবসায়ীরা ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ১১৫-১১৮ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগেও খুচরা দোকানগুলোতে ১০৫ টাকা ডজন ডিম পাওয়া গেছে। আর এক হালি পাওয়া গেছে ৩৫ টাকায়।
Advertisement
ডিমের এই দম রোজা শুরুর আগের মাসের থেকেও অনেক বেশি। রোজা শুরুর আগের সপ্তাহেও ব্যবসায়ীরা ডজন হিসেবে ডিম বিক্রি করেন ৭৫-৮০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয় ৭-৮ টাকায়। সে হিসাবে রোজার মাসের আগের তুলনায় ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা এবং প্রতি পিচে বেড়েছে ৩ টাকা করে।
বর্তমানে ডিমের যে দাম দাঁড়িয়েছে, এমন বেশি দামে রাজধানীতে কতদিন আগে বিক্রি হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তবে একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন কয়েক বছরের মধ্যে ডিমের দাম এত বাডেনি।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. জয়নাল বলেন, আমি পাঁচ বছরের ওপরে ডিমের ব্যবসা করছি। এখন যে দামে ডিম বিক্রি করছি, এত বেশি দামে এর আগে কখনও বিক্রি করিনি। এর আগে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করেছি। আর এখন বিক্রি করছি ১০৫ টাকা ডজন।
ডিমের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে হাজিপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. সাবু বলেন, ডিমের দাম ঠিক কী কারণে বাড়ছে তা আমরা বলতে পারবো না। এটা খামারিরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে শোনা যাচ্ছে বাজারে ডিমের চাহিদা খুব বেড়েছে। খামারিরা ডিম সরবরাহ দিতে পারছেন না। যে কারণে ডিমের দাম বাড়ছে।
এ ব্যবসায়ী বলেন, চলতি মাসেই ডিমের দাম তিন দফা বেড়েছে। রোজার ঈদের পর থেকেই ডিমের দাম বাড়ছে। প্রতি ধাপেই ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫ টাকার ওপরে। রোজার সময় ডিমের ডজন ৬৫ টাকায়ও বিক্রি করেছি। আর এখন সেই ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ১০৫ টাকা ডজন।
এদিকে ডিমের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। রামপুরায় ডিম কিনতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, রোজার সময় ডিমের যে দাম ছিল, এখন তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এক ডজন ডিম কিনতে লাগছে ১১০ টাকা। এত দাম দিয়ে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে ডিম খাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু বিপদে পড়ে ডিম কিনতে এসেছি। বাসায় মেহমান এসেছে।
খিলগাঁও বাজার থেকে ডিম কিনছিলেন রাফিউল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা। তিনি বলেন, এখন ডিমের যে দাম তা কিছুতেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। ডিমের এমন দাম বাড়ার পেছনে নিশ্চয় কারসাজি আছে। কিন্তু কে দেখবে এসব। আমাদের দেশে কোথায় কী নৈরাজ্য হচ্ছে, তা দেখার কেউ নেই। ফলে একের পর কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটছে। ডিমের দাম বাড়া তো ছোট ঘটনা।
এমএএস/এমবিআর/এমএস