আন্তর্জাতিক

নয়া পাকিস্তান গড়ার ডাক ইমরানের

ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনৈতিক নেতা বনে যাওয়া পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ও দেশটির হবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার ডাক দিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না উল্লেখ করে সবার জন্য এক নীতিতে সরকার পরিচালনার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

Advertisement

‘আমরা এমন এক আইনের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবো, যা সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। আমরা এটি প্রতিষ্ঠা করবো, যা দেশের সরকার পরিচালনা ব্যবস্থা সংশোধন করবে।’

নয়া পাকিস্তান গড়তে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার পাশাপাশি পররাষ্ট্র নীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন তিনি। চিরবৈরী প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির ইঙ্গিত দিয়ে ইমরান বলেছেন, ‘আমাদের সম্পর্কের সংকটগুলোর সমাধান করতে চাই। এক্ষেত্রে ভারত যদি এক ধাপ এগিয়ে আসে, তাহলে অামরা দুই ধাপ এগিয়ে যাব।’

পাকিস্তানের ১১তম সাধারণ নির্বাচনের দীর্ঘ ২৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেনি দেশটির নির্বাচন কমিশন। তবে ইমরান খান তার দল জয়ী হয়েছে বলে দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে তিনি এ দাবি করেন।

Advertisement

আরও পড়ুন : জিন্নাহর স্বপ্নের পাকিস্তান গড়ার অঙ্গীকার ইমরানের

৬৫ বছর বয়সী পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যম তাকে যেভাবে বলিউডের ভিলেনের মতো উপস্থাপন করেছে তাতে তিনি একটু হতাশ। ‘ক্রিকেটের কারণে আমি অনেকবার ভারত সফর করেছি এবং আমি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই।’

সেনাবাহিনীর সহায়তায় ও ভোট কারচুপির মাধ্যমে পিটিঅাই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বলে বিরোধীরা দাবি করলেও সেই শঙ্কা তিনি নাকচ করে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন। আধা-ঘণ্টার ওই ভাষণে পররাষ্ট্র নীতির পাশাপাশি পিটিআই নেতৃত্বাধীন সম্ভাব্য নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন হবে সে ব্যাপারেও কথা বলেছেন ইমরান। তবে অধিকৃত কাশ্মির ইস্যুতে দুই দেশের সরকারের মাঝে সবার আগে আলোচনা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

‘আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে কাশ্মির নিয়ে। কাশ্মির সম্পর্কে আমাদের কথা বলা প্রয়োজন... ভারত বেলুচিস্তান দেখে, আমরা কাশ্মির দেখি। এই দোষারোপের খেলা বন্ধ করতে হবে। ভারত যদি এক ধাপ এগিয়ে আসে তাহলে আমরা দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

Advertisement

আরও পড়ুন : উদযাপনে মাতোয়ারা ইমরান সমর্থকরা

দীর্ঘ ২২ বছরের সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, গত দুই দশক ধরে তিনি যে অঙ্গীকার বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতেন, অবশেষে সেই সুযোগ তাকে জনগণ দিয়েছে।

‘আমি রাজনীতিতে কেন এসেছি সেটি পরিষ্কার করতে চাই। রাজনীতি থেকে আমার কিছুই নেয়ার নেই। কিন্তু পাকিস্তানকে এমন একটি দেশ হিসেবে দেখতে চেয়েছি, যে দেশের স্বপ্ন আমার নেতা কায়েদে-ই-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দেখতেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি বেলুচিস্তানের মানুষের প্রশংসা করতে চাই। তারা যে ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও মর্মান্তিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন এবং ভোট দেয়ার জন্য বেরিয়ে এসেছেন; এজন্য পুরো জাতির পক্ষ থেকে আমি তাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।’

আরও পড়ুন : রেহামকে বিয়ে করাই ছিল বড় ভুল : ইমরান খান

‘অনেক মানুষ এই নির্বাচনের জন্য অনেক কিছু উৎসর্গ করেছেন। আমি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করতে চাই। আমি যে ধরনের পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন দেখছি তা সবাইকে জানাতে চাই- এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যা মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; যেখানে কর্তৃপক্ষ বিধবা এবং গরীব মানুষদের দায়িত্বগ্রহণ করতো।’

‘আজ আমাদের দেশ কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। এখন থেকে আমাদের সব নীতিমালা হবে দরিদ্র-অসহায় মানুষের ভাগ্য গড়তে কাজ করা।’ ভাষণে ইমরান খান দেশ নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ‘ডন’।

বেসরকারিভাবে ভোট গণনা শেষে ফলাফলে ইমরান খানের তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) ১২০টি আসন, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৬১টি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৪০টি আসনে জয়ী হয়েছে।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানের প্রথম প্লেবয় ইমেজের প্রধানমন্ত্রী

পাকিস্তানের এবারের জাতীয় পরিষদের ২৭২ আসনের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ হাজার ৪৫৯ প্রার্থী। এরমধ্যে শুধুমাত্র পাঞ্জাব থেকেই এক হাজার ৬২৩ জন, সিন্ধ থেকে ৮২৪ জন, খাইবার পাখতুনখাওয়া থেকে ৭২৫ জন ও বেলুচিস্তান থেকে ২৮৭ জন।

এছাড়া দেশটির দুটি আসন এনএ-৬০ ও এনএ-১০৮ এ নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশটির এগারোতম সাধারণ নির্বাচনে ১০ কোটির বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

কোনো একক দল ক্ষমতায় যেতে হলে থলেতে ভরতে হবে কমপেক্ষ ১৩৭ আসন; তবেই দেশ শাসনের জন্য সরাসরি সরকার গঠন করতে পারবে। এছাড়া কোনো দলই যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে তাহলে ঝুলে যাবে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট। দ্বারস্থ হতে হবে ছোট-খাট দলগুলোর; জোট গঠন করে তবেই মসনদে যেতে হবে।

সূত্র : ডন, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, জিও টিভি। 

এসআইএস/পিআর