দেশের ২০ দশমিক ৬ ভাগ রোগী হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয় পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে। ৯০ ভাগ রোগী জানেই না যে সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত। হেপাটাইটিসের এই ভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র উপায় সচেতনতা সৃষ্টি এবং সঠিক সময়ে পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস : অতীত ও বর্তমান প্রাদুর্ভাব এবং নির্মাণের সুপারিশ’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত হেপাটাইটিস এ,বি,সি,ডি,ই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। জনস্বার্থে এদের মধ্যে ‘ই’ এবং ‘বি’ ভাইরাসকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। হেপাটাইটিস-ই’র দিকেও নজর দিতে হবে। চোখ হলুদ হলে আমরা যেই জন্ডিস বলে ধরে নেই সেটি ‘ই’ ভাইরাসের মাধ্যমেই ছড়ায়।
এর দ্বারাই পৃথিবীর সবদেশে জন্ডিস হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক বছর আগে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে হয়েছিল। ইয়াং অ্যাডান্টদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। এই জন্ডিস নিরাময়ে কোন ওষুধ নেই। শুধু সচেতনতা ও নিরাপদ পানি প্রয়োজন। বিশুদ্ধ নয়, প্রয়োজন নিরাপদ পানি।
Advertisement
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস নিয়ে তিনি বলেন, এই ভাইরাস মূলত গর্ভবতী মা’র কাছ থেকে শিশুর শরীরে যায়। যারা এই ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন তাদের উচিত শহরে ও গ্রামের গর্ভবতী মায়েদের চিহ্নিত করে তাদের টেস্ট করানো।
হেপাটোলজি সোসাইটির গবেষণাপত্রটি জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে ব্যবহার হবে বলেও যোগ করেন তিনি।
সেমিনারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি (বিশেষজ্ঞ ভাইরেলজিস্ট) অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসের জন্য এখনও কোনো ভ্যাক্সিন আসেনি। দেশের বাইরে একটি ট্রায়াল চলছে, ফলাফল ইতিবাচক হলে বাংলাদেশেও ভ্যাক্সিন আসবে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সুষ্ঠু চিকিৎসা দিতে আমাদের সবাইকে একটি হেপাটোলজিস্ট ইনস্টিটিউট করতে হবে। এই ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের ক্ষুধা কম থাকতে হবে। যাতে কম দামে বেশি লোকের কাছে পৌঁছানো যায়।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এম এ ফয়েজ বলেন, হেপাটাইটিস বি ও সি প্রতিরোধের জন্য সার্বজনিন প্রতিরোধ দরকার।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হেপাটোলজি সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ডা. মো. শাহিনুল আলম।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস প্রতিরোধে অন্যতম করণীয় হচ্ছে ‘গেট টেস্টেড’ অর্থাৎ পরীক্ষা করানো। কারণ এই রোগে আক্রান্ত ৯০% জানে না যে তারা এই ভাইরাস বহন করছে। এটি শনাক্ত করার জন্য দুইটি সাধারণ পরীক্ষা করানো হয় যা সরকারি হাসপাতালে সম্ভব।
গবেষণার আলোকে তিনি কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সবার জন্য বিনামূল্যে হেপাটাইটিস বি-সি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পরীক্ষার খরচ হবে মাত্র ৩০ টাকা। সারাদেশের লোকের এই পরীক্ষা করাতে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে, ফলে ৫০০০ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মবিন খান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডা. গোলাম মোস্তফা, ডা. আবু সাঈদ, ডা. মোতাহার হোসাইন, ডা. গোলাম আজম, ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম।
এআর/এমআরএম/পিআর