আন্তর্জাতিক

পুরুষরা ভয়ে গ্রামছাড়া, মৃতের সৎকারে নারীরা

ক্যামেরুনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর বেল্লো। এক সময় এটি ছিল একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র, ছিল পারিবারের মতো একটি কমিউনিটি। যার নাম ‘কম’। একসময় এখানে ছিল সৌহার্দ্য, আনন্দবেষ্টিত একটি পরিবেশ। তবে সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন সবখানেই শুধু মৃত্যুর গন্ধ। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে শতাধিক পরিবার। কাউকে আবার আশ্রয় নিতে হয়েছে দূরের কোনো শহরে। এই পরিস্থিতির পেছনে দায়ী স্থানীয় আম্বাজোনিয়া ফ্রিডম ফাইটারস দল।

Advertisement

ইংরেজি ভাষাভাষি ক্যামেরুনের এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি গত কয়েক বছর ধরে একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি আসছে। গ্রামের বেশিরভাগ তরুণ ভিড়ছে এই অস্ত্রধারীদের দলে। এখন বেল্লো গ্রামের প্রতিটি কোনায় এই সেনা সদস্যদের বিচরণ করতে দেখা যায়। যার পরিণতি হয় বেশ ভয়াবহ।

যুদ্ধ-সহিংসতা এই শহরে যেন নিত্যদিনের ব্যাপার। তবে যুদ্ধের কারণে নৃশংসতা চলতি বছর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শহরের বিভিন্ন অংশ প্রায়শই অজ্ঞাত মরদেহ পাওয়া যায় একদম জ্বলন্ত অবস্থায়।

বেল্লোর বেশিরভাগ তরুণ ভিড়ছে এই অস্ত্রধারীদের দলে

Advertisement

নোয়াম ফুটুঙ্গা, ৬০ বছর বয়সী ৫ সন্তানের এই জননী বেলোতে তার পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাজধানী ইয়ন্দোতে। যেদিন তার প্রিয় সন্তানকে তার সামনে গুলি করে হত্যা করে সেনারা, তারপর পরই তিনি ঘরছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। তাকে বাঁচানো যায়নি। এরপর থেকে বেল্লোর নারীরা বিভিন্ন ঘটনায় আহতদের সাহায্য করে থাকে। কারণ, পুরুষরা প্রতিনিয়ত প্রাণ হারানোর আতঙ্কে থাকে। এমন অবস্থায় মেয়েরাই এখন ছেলেদের ভূমিকা পালন করছে। একসময় মরা মানুষের গন্ধে পুরো শহর গুমোট হয়ে উঠেছিল। পরে আমরা নারীরাই মাটি খুঁড়ে তাদের কবর দিয়েছি। আমাদের সম্প্রদায়ে মেয়েদের এমন কাজ করার নিয়ম ছিল না। কিন্তু উপায় না পেয়ে আমাদেরই পুরুষদের এসব দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়েছে।’

পাশের জিনেকেজা গ্রামের চিত্র প্রায়ই একই রকম। এখানে নারীদের প্রিয়জন হারানোর শোকে বিলাপ করতে দেখা যায়। এখানকার নারীরাও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে পরে থাকা মরদেহগুলোকে খুঁজে বের করে সৎকারের ব্যবস্থা করেন।

এমন অনেক মরদেহই পাশে বয়ে যাওয়া নদীতে জোয়ারে তোড়ে ভেসে আসে। সেগুলোকে কবর দেয়ার ব্যবস্থা করেন এই নারীরাই। অথচ এই সম্প্রদায়ে মৃতদের সৎকারে নারীদের সম্পৃক্ততার কোনো নিয়ম নেই। এইসব কাজের দায়িত্ব শুধুমাত্র পুরুষের।

সম্প্রদায়ের প্রিন্স মনে করেন এই কারণে এই অঞ্চলে সামনে আরও অশুভ দিন ঘনিয়ে আসবে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য অনুযায়ী একজন নারীর এমন কাজ করার কোনো সুযোগই নেই। যখন নিয়ম ভাঙা হয়, তখন আমাদের ওপর দিয়ে অনেক দুর্যোগ বয়ে যায়। তবে এজন্য নারীদের দোষারোপ করারও কোনো উপায় নেই। কারণ যা হচ্ছে তাতে কারো কোনো হাত নেই।’

Advertisement

ক্যামেরুনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও প্রথা রক্ষার ব্যাপারে বেশ সচেতন। তবে সম্প্রতি এই অ্যাম্বাজোনিয়া সেনাদের কারণে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় বদলে গেছে দৃশ্যপট।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসআর/আরআইপি