অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশ অমান্য করে এক ব্যক্তিকে সাজা দেয়ার ঘটনায় কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল মাহমুদ হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
Advertisement
তবে, আদালত ক্ষমার আবেদন গ্রহণ না করে ওই ঘটনায় দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করার জন্য বলেছেন। একইসঙ্গে, মামলার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটকারী হাবিবুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম।
গত ১৬ জুলাই তলবের পরিপ্রেক্ষিত ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল মাহমুদ আজ নির্ধারত দিন বেলা ১১টায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে উপস্থিত হন।
Advertisement
তার পক্ষে আদালতে আজ শুনানি করেন আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। শুনানিতে তিনি আদালতকে বলেন, বে-খেয়াল বশত এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, আপনি (সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল মাহমুদ) কোন এখতিয়ারের বলে এই রায় দিয়েছেন? উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে এক ব্যক্তিকে সাজা দিয়ে বলছেন ভুল করেছি, ক্ষমা করে দিন। এটা কি শুধুই ভুল, আপনি অমার্জনীয় ভুল করেছেন।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য বলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে, নিম্ন আদালতের মামলার নথি তলব করেন। পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৮ আগস্ট পরবর্তী দিন ঠিক করেন। ওই দিনও কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল মাহমুদ হাইকোর্টে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের অধিবাসী হাবিবুর রহমান পতুল ১৫ লাখ টাকা ধার নেন বলে অভিযোগ করেন উকিলপারা গ্রামের অধিবাসী আপ্তাব উদ্দিন ছেনু। পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৯ মার্চ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দশ লাখ টাকার চেক প্রতারণার মামলা করেন ছেনু।
Advertisement
এই মামলায় ওই বছরের ১৮ জুন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল মাহমুদ। অভিযোগ গঠন আদেশের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. খাদেম উল কায়েস এর আদালতে রিভিশন মামলা করেন হাবিব। রিভিশন আবেদনে বলা হয়, এই মামলার পূর্বে ছেনু মিয়া ২০১৬ সালের ১৯ জুন হাবিবের বিরুদ্ধে একই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরো একটি মামলা করেন। যদিও হাইকোর্ট ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেন।
বিধান অনুযায়ী একই ঘটনায় দুই মামলা করার আইনত কোনো সুযোগ নেই। এরপরও আসামির বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। রিভিশন মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বাতিল করে দেয় দায়রা জজ আদালত। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেয়া এই আদেশ উপেক্ষা করে ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল মাহমুদ গত ১১ জুন চেক প্রতারণার মামলায় হাবিবকে দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
পরে তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৬ জুলাই সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেন। আজ ছিল ম্যাজিস্ট্রেটের হাজিরা দিন। এ দিন মামলার কার্যক্রম পিছিয়ে ৮ আগস্ট তারিখ ঠিক করেছেন আদালত।
এফএইচ/জেএইচ/জেআইএম