ক্যাম্পাস

পোগোজ এখন জবির ল্যাবরেটরি স্কুল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে দেশের প্রথম বেসরকারি বিদ্যালয় পোগোজ স্কুলকে। তবে দেশের ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম আর ‘পোগোজ স্কুল’ থাকছে না। পোগোজ স্কুল এখন জবির নতুন চালুকৃত বিভাগ শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে থাকছে। বর্তমান পোগোজ স্কুলের নতুন নাম হবে “পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়”।বৃহস্পতিবার দুপুরে জবি উপাচার্যের সভাকক্ষে এক যৌথসভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে জবি কর্তৃপক্ষ এবং পোগোজ স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান পর্বতসহ অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জবির সঙ্গে পোগোজ স্কুল একীভূত হওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া, রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার মো. ওহিদুজ্জামান, পোগোজ স্কুলের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।এক নজরে পোগোজ:১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে পোগোজ প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ছিল তাঁরই বাড়ির নিচতলায়। বাড়িটি ঢাকার আর্মানিটোলায় কোথাও ছিল বলে ধারণা করা হয়। পোগোজ স্কুলের নাম দিয়েছিলেন “পোগোজ অ্যাংলো ভার্নাকুলার স্কুল।” সেখান থেকে ১৮৫৫ সালে স্কুলটি সরিয়ে নেওয়া হয় আর্মানিটোলার জে.পি পানিওতির মালিকানাধীন ভাড়া বাড়িতে। এবং আরো পাঁচবছর পর সদরঘাটের শাবিস্থান সিনেমা হলের পাশে একটি দোতলা বাড়িতে স্কুলটি স্থানাস্তরিত হয়। তারপর স্কুলটি আবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে সরিয়ে নেওয়া হয়। পোগোজ স্কুলের প্রথম হেড মাস্টার ছিলেন পোগেজ নিজেই। পড়াশোনা ভালোবাসতেন। অনেকগুলি ভাষা জানতেন পোগোজ। ১৮৬৭ সালে পোগোজ স্কুলের ছাত্রসংখ্যা ছিল ৫০০। স্কুলটি সে সময় বাংলার সবচে বড় স্কুলের অভিধা পেয়েছিল। কাজেই স্কুলটির পিছনে নিকি পোগোজের শ্রম ও ভালোবাসার কথা সহজেই অনুমান করা যায়। ১৮৭৮ সালে নিকোলাস পোগেজ কী কারণে লন্ডন চলে গেলেন তা এখনো অজানা। তারপর স্কুলটির মালিকানা পেলেন তৎকালীন ঢাকার বিশিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা ও জমিদার মোহীনিমোহন দাস। উদার মানুষ বলেই স্কুলটির সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করেননি মোহীনিমোহন। এর মধেই বেঁচে রইলেন নিকোলাস পোগোজ। তৎকালীন সময়ে ঐ ঐতিহাসিক স্কুলটিতে যারা পড়েছেন তাদের মধ্যে কবি শামসুর রাহমান অন্যতম। যে কারণে স্বামী বিবেকানন্দ, মাইকেল মধূসুধন দত্তের মতন মানুষ স্কুলটি দেখতে এসেছিলেন। আগেকার সেই গৌরব অনেকটা অস্তমিত হয়ে এলেও আজও পোগোজ স্কুলটি পুরনো ঢাকায় টিকে আছে একজন অবাঙালি আর্মেনিয়র ভালোবাসার চিহ্ন হয়ে। পোগোজ স্কুলের সফল শিক্ষার্থীরা হলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) আতাউর রহমান খান, অতি পরিচিত নিশিকান্ত চ্যাটার্জী প্রথম বাঙ্গালী যিনি ডক্টর ডিগ্রি নেন এবং প্রথম ভারতীয় ডাক্তার অফ সায়েন্স আগোরনাথ চ্যাটার্জী পাস করেন, তিনি ছিলেন সরোজিনী নাইডু এর পিতা। ঢাকা কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ডক্টর পি. কে. রায়, প্রথম ভারতীয় মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার কে.জি. গুপ্ত এবং প্রথম পূর্ব বাংলার আইসিএস এবং গিরিশ চন্দ্র সেন এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। এসএম/এসকেডি/এমআরআই

Advertisement