পুরনো শহর কলকাতা। শহরে রাস্তার দু’পাশে পুরনো দালান কোঠা যেন ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন। শহরের জীবনযাত্রার মান সময়ের আবর্তে অনেকটা পাল্টেছে। তবে এখনো এমন কিছু প্রাচীন ঐতিহ্য আছে, যাকে আধুনিকতার ছোঁয়া আজও পেছনে ফেলতে পারেনি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আবু রায়হান মিকাঈল-
Advertisement
আমার কলকাতা ভ্রমণ নিয়ে লেখা ধারাবাহিক ফিচারের আজ ২য় পর্ব প্রকাশিত হলো। গত পর্বে বলেছিলাম ‘পাতাল রেল’ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। আজ মেলে ধরবো কলকাতার রাজপথের ট্রাম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
সময়টা পড়ন্ত বিকেল। সেদিনও ছিল রিমঝিম বৃষ্টির ছোঁয়া। শিয়ালদহ সংলগ্ন রাস্তায় হাঁটছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো রাজপথের ট্রাম লাইন। কিছুক্ষণ পরেই চোখের সামনে ওই লাইন দিয়ে দুই বগিযুক্ত একটা ট্রাম চলে গেল। প্রথম দর্শনে আমার কাছে দৃশ্যটা ছিল নয়নাভিরাম। বেশ কিছুক্ষণ পর এলো আরেকটি ট্রাম। তারপর সেটাতে চড়ে বসলাম।
ট্রেনের মতো ঝক ঝকা ঝক শব্দ করে চলে ট্রাম। তবে চলার গতিটা বেশ কম। আর এই চলার গতি তুলনামূলক কম হওয়ায় কলকাতা শহর ঘুরে দেখার ক্ষেত্রে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় ট্রামই রয়েছে শীর্ষে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার থেকে ৩০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করে ট্রাম।
Advertisement
> আরও পড়ুন- ঘুরে আসুন হরিণঘাটা বনাঞ্চল
প্রবীণদের মুখে এখনো শোনা যায়, এক সময় কলকাতাকে প্রাণ সঞ্চার করেছিল রাজপথের ট্রাম। যুগে যুগে সেই ট্রাম আজ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। কলকাতার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে রয়েছে ট্রাম। আবার কলকাতার অনবদ্য সৌন্দর্যের অন্যতম একটি নাম এই ‘ট্রাম’। বলা যায়, শহরের প্রাচীনতম ‘আধুনিক’ বাহন এটি।
বাস্তবে দেখা গেছে, কলকাতাবাসীর কাছে ট্রাম শুধুই যানবাহন নয়, এ এক অন্যরকম আবেগ! এখানে বাসের মতো গাদাগাদি ভিড় নেই, আবার খোলসখানা ঠিক ট্রেনের মতো; কলকাতার বুকে সর্পিল গতিতে এঁকেবেঁকে চলেছে নিজের দাপটে। আর হবে না-ই বা কেন? ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম চালু হয়েছিল এই অভিনব যান, যা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মাথা উঁচু করে এখনো তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
বৈদ্যুতিক লাইনে চলা ট্রাম প্রথম দর্শনে যে কাউকে তার ভালোবাসায় মুগ্ধ করতে সক্ষম। তবে এই ট্রাম কিন্তু শুরু থেকেই বৈদ্যুতিক ছিলো না। ১৪৫ বছর আগে ১৮৭৩ সালে আর্মেনিয়া ঘাট থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো ট্রাম চলাচল শুরু হয়। শুরুর দিকে ঘোড়া দিয়ে ট্রাম চালানো হতো। সে সময় ১৭৭টি ট্রামের জন্য ১ হাজারটি ঘোড়া ব্যবহার হতো। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে ১৯০২ সালে ট্রাম চালাতে বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কলকাতায় ট্রাম পরিচালনার দায়িত্ব নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
Advertisement
> আরও পড়ুন- গতিমান এক্সপ্রেসে তাজমহলের পথে
আজও প্রায় ৩০ হাজার কলকাতাবাসীর মূল পরিবহন ট্রাম। সঙ্গে আছে কলকাতার মানুষের ঐতিহ্যের প্রতি অগাধ আবেগ। ট্রাম ঘিরে সেই আবেগ আর নস্টালজিয়া যতদিন থাকবে ততদিন ট্রাম ইতিহাসকে বুকে নিয়ে কলকাতার রাস্তায় চলতে থাকবে।
এসইউ/পিআর