বেশ কিছুদিন ধরে ফেসবুক লাইভে বাংলাদেশের নানা বিষয় নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী পং পং আসাদ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে নিয়েও বাজে কথা বলতেন তিনি।
Advertisement
শিক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান, জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির হোসেন, গায়িকা পড়শীসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সমালোচনাই ছিল যেন তার কাজ।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে সিলেটের মেয়েদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। কয়েকদিন আগে ফেসবুক লাইভে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি। যা নিয়ে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মাঝে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় পং পং আসাদকে গ্রেফতারও করা হয়। গ্রেফতারের পর অনেকের কৌতূহল জাগে এই পং পং বাংলাদেশের কোন জেলার মানুষ। সেই সূত্র ধরে খোঁজ করা হয় তার জন্মস্থানের।
জানা যায়, মালয়েশিয়া প্রবাসী পং পং আসাদের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমত ইউনিয়নের ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে। তার প্রকৃত নাম কামরুজ্জামান শিকদার। গ্রামের সবার কাছে মানসিক বিকারগ্রস্ত হিসেবে পরিচিত কামরুজ্জামান।
Advertisement
ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের কামরুজ্জামান শিকদারের প্রতিবেশীরা জানান, কামরুজ্জামান শিকদারের (পং পং আসাদ) বাবার নাম মৃত আব্দুল আজিজ শিকদার। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে কামরুজ্জামান সবার ছোট। বাবুগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর তার পড়ালেখা করা হয়নি।
১৯৯৩ সালে উপজেলা সদর খানপুরা এলাকার এক নারীকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান কামরুজ্জামান। কিন্তু বেশি দিন তা স্থায়ী হয়নি। দুই পরিবারের চাপে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ১৯৯৪ সালে অর্থাৎ প্রায় দুই যুগ আগে জীবিকার সন্ধানে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান কামরুজ্জামান। দীর্ঘ সময় সেখানে বসবাস করে কামরুজ্জামান নাম বদলে হয়ে যান পং পং আসাদ।
এরপর মালয়েশিয়ার কেপাং শহরে অবস্থানকালে চাইনিজ মালয় (তার বয়সের চেয়ে ৫ বছরের বড়) এক নারীকে বিয়ে করেন পং পং। তার স্ত্রী একটি হাসপাতালের সেবিকা হিসেবে কর্মরত। সেখানে নানা মানুষের সমালোচনা করেই দিন কাটছিল তার।
কামরুজ্জামান শিকদারের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিজে কোনো চাকরি না করলেও স্ত্রীর আয়ের ওপর নির্ভর করে জীবন চলে তার। সেই সঙ্গে বাসায় বসে অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কাজও করেন তিনি।
Advertisement
বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক মোস্তফা কামাল চিশতী বলেন, তার মতো একজন লোকের জন্ম এখানে ভাবতেই খারাপ লাগে। পং পং আসাদ আসলে একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত। কোনো সুস্থ-মস্তিস্কের মানুষ এ ধরনের বাক্য বলতে পারে না। আমাদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, রাজনৈতিক বিরোধও থাকতে পারে। কিন্তু প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের সম্মানবোধ নিয়ে কথা বলা উচিত। যা কামরুজ্জামানের (পং পং আসাদ) একেবারেই নেই। সে মানসিক ভারসাম্যহীন, তার চিকিৎসা করানো উচিত।
রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, এলাকায় কামরুজ্জামানের (পং পং আসাদ) বেয়াদব হিসেবে পরিচিত। তার আচরণে একসময় গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এক নারীকে নিয়ে উধাওয়ের পর লোকলজ্জায় এলাকা ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানেও বেয়াদবি চালিয়ে যান পংপং। অবশেষে ধরাও পড়লেন।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে ফেসবুক লাইভে বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর ভাষায় মন্তব্য করেন কামরুজ্জামান (পং পং আসাদ)।
এ ঘটনায় মালয়েশিয়া বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মামুন বিন আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে আইসিটি আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় কামরুজ্জামানকে (পং পং আসাদ) গ্রেফতার করে মালয়েশিয়া পুলিশ।
সাইফ আমীন/এএম/আরআইপি