লাইফস্টাইল

সন্তান নেওয়ার আগে জেনে নিন কয়েকটি পরামর্শ

সন্তান ছাড়া একটা পরিবার সম্পূর্ণ হয় না। আমাদের সামাজিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পরিবার। একজন মহিলা ও পুরুষ যখন নতুন সংসার শুরু করে তখন তারা নানা স্বপ্ন দেখে। একটি দম্পতি সংসার শুরু করার পরেই সন্তানের অভাববোধ করেন।এটাই জগতের নিয়ম। কিন্তু একটি সংসারে নতুন অতিথি আসার আগে অনেক প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে।একটি সুস্থ ও সবল বাচ্চার স্বপ্ন দেখে সব দম্পতিরাই ।তাই স্বপ্নের সূচনা যেন ভালভাবে হয়, তাহলে স্বপ্নটি পূরণ হবার সম্ভাবনাও বেশী থাকে। সব মহিলাই উপকৃত হতে পারেন যদি গর্ভধারণের আগের প্লান সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকে।আসুন জেনে নেওয়া যাক, গর্ভধারণের আগে কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।মানসিক প্রস্তুতিআপনি ও আপনার স্বামী যখন গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা করবেন,তখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেবেন, আপনারা এখন সন্তান চান কিনা? সন্তানের দেখভাল করার মত লোকজন ও পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় আছে কিনা? ক্যারিয়ারের গঠনের মাঝে সন্তান নিলে সামলাতে পারবেন কিনা? দু জনের মাঝে ভাল বোঝাপড়া আছে কিনা?মানসিকভাবে বর্তমানে আপনি বিপর্যস্ত কিনা? এই প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন।যদি হ্যাঁবাচক উত্তর পান তবে বুঝতে হবে যে আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত।যদি না বাচক উত্তর পান তবে গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগে আরও ভালমতো ভেবে নিন।আর্থিক প্রস্তুতিঅর্থ ছাড়া জীবন অচল।তাই আপনার পরিবারে কোন নতুন অতিথিকে আনতে চাইলে তার ভবিষ্যতটা যতটা পারেন সুরক্ষিত করার চেষ্টা করবেন। কেননা সন্তান পালন বর্তমান যুগে অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। তাই গর্ভধারণ করার ইচ্ছা থাকলে আগে অর্থনৈতিক দিকটাও ভেবে দেখবেন।একটা প্লানও করে নিতে পারেন।একটা ফিক্সড ডিপোজিট অথবা ইন্সুরেন্স করিয়ে নিতে পারেন গর্ভধারণের আগে।এতে আপনার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত সিকিউর থাকবে।এছাড়া একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমানো উচিৎ গর্ভধারণের চেষ্টাকালীন সময়ে।কেননা গর্ভাবস্থায়,বাচ্চা প্রসবকালীন ও বাচ্চা জন্মদানের পরবর্তী অবস্থায় অর্থের দরকার হয়।শারীরিক প্রস্তুতিআপনি যদি খুব শ্রীঘ্রই বাচ্চা নিতে চান তাঁর জন্য একটা বিশেষ সময়ের পরিকল্পনা করুন। এরপর মেডিকেল চেকআপ করুন।এতে করে আপনি জানতে পারবেন যে,বাচ্চা নেওয়ার জন্য আপনার শরীর প্রস্তুত কিনা? কেনোনা একটি স্বাস্থ্যবান বাচ্চা জন্মদেওয়া একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান মায়ের উপর নির্ভর করে।এজন্য প্রি কন্সেপসন,প্রি প্রেগনেন্সি চেক আপ বা গর্ভধারণ করার আগের চেকআপটা করে নেওয়া উচিৎ। কেনোনা কিছু মেডিকেল কন্ডিশন ও জীবনযাত্রার মান গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে, এমনকি গর্ভধারণ করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে।কি কি চেকআপ করাবেন?যদি আপনি সন্তানধারণের চেষ্টা করেন এবং আগে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার চিকিৎসকে বলুন কবে নাগাদ তা বন্ধ করবেন? সাধারণত গর্ভধারণ করার চেষ্টা করার কিছু মাস আগে থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি বন্ধ করতে বলেন ডাক্তাররা।আপনার কিছু স্বাভাবিক মাসিক হওয়া দরকার গর্ভধারণের আগে।এতে করে গর্ভধারণ পরবর্তী বাচ্চা প্রসবের সময় নির্ধারণ করতে সুবিধা হয়।স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরীক্ষা করুন।আপনার কোন রোগ থাকলে তা সারিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন।এমনকি আপনার স্বামীর কোন অসুখ থাকলেও তার চিকিতসা করাতে হবে।এরপর ডাক্তার আপনার শারীরিক কিছু পরীক্ষা যেমন ,ওজন ,রক্তচাপ ,ও আপনার নিতম্ব স্বাস্থ্যবান কিনা তা পরীক্ষা করবেন। কেননা খুব ছোট ও চাপা নিতম্বে বাচ্চা জন্মের সময় জটিলতা দেখা দেয়। তাই আগে থেকেই পরীক্ষা করা থাকলে প্রসবকালে আপনার ডাক্তার সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।এরপর ডাক্তারটা পরীক্ষা করবেন যে,আপনি সন্তান ধারণ করতে পারবেন কিনা?মানে বন্ধ্যা কি না তা পরীক্ষা করেন।অনেক কারণে একটি দম্পতি বন্ধ্যা হতে পারে।মহিলা ,পুরুষ উভয় ই এর জন্য দায়ী হতে পারে।এজন্য যথাযথ পরীক্ষা করে সমস্যা ধরা পড়লে,যার সমস্যা তার চিকিৎসা করাতে হবে।প্যাপ টেস্ট করাতে হবে,জরায়ুমুখে কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানার জন্য।কেনোনা একটি সার্থক প্রসব সুস্থ জরায়ু ও গর্ভাশয়ের উপর নির্ভর করে।এছাড়াও ডায়াবেটিস,উচ্চরক্তচাপ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।কারণ এইসব অসুখ মারাত্মক সমস্যা করে গর্ভাকালীন ও পরবর্তী সময়ে।তাই গর্ভধারণের আগেই এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করুন ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।এছাড়া এইচ আই ভি এই টেস্ট গুলো করা ভাল। কেনোনা এগুলো থাকলে গর্ভধারণ করা ঝুকিপূর্ণ।এছাড়াও আপনি যদি দ্বিতীয় বারের মত মা হতে যান এবং আপনার যদি আগের গর্ভকালীন অবস্থায় নিম্নোক্ত সমস্যা হয়ে থাকে, বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া, জন্মের সময় বাচ্চা মরে যাওয়া, অকালে বাচ্চা হওয়া, বাচ্চার শারিরীক গঠনে সমস্যা থাকা। এইসব হয়ে থাকলে পরবর্তী বাচ্চা নেওয়ার সময় আপনাকে আরও সচেতন হতে হবে ও চিকিৎসকের পরামর্শমত গর্ভধারণ করতে হবে।আপনার ও আপনার স্বামীর পরিবারে কোন জেনেটিক সমস্যার কারণে কারো অসুখ হলে,একজন জেনেটিক কাউন্সিলারের সাথে পরামর্শ অবশ্যই করবেন।অ্যাজমা,ডায়াবেটিস,ডিপ্রেসনের ও অন্যান্য কোন ওসুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময়ই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।কেননা এতে সন্তান বিকলাঙ্গ হবার চান্স থাকে। রুবেলা,চিকেন পক্স এর টিকা আগেই নিয়ে রাখুন। যে কোন ভ্যাক্সিন নেয়ার কমপক্ষে এক মাস অপেক্ষা করুন গর্ভধারণের চেষ্টা করার জন্য। দাঁতের যত্ন নিন।দাঁতের সমস্যা হলে একজন ডেন্টিস্ট কে দেখান।কারণ এটা প্রমাণিত যে দাঁতের মাড়ীতে কোন অসুখ থাকলে কম ওজনের ও অকালে জন্ম হয় শিশুর।

Advertisement