জাতীয়

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

স্বাধীনতার সময়ে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। জঙ্গীবাদ-মৌলবাদের বিষবাষ্পে জাতি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। মুসলমানদের অধিকার যেমন পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি তেমনি সনাতন ধর্মের জনগণের অধিকারও নিশ্চিত নয়। তাই আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হবে।বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস’ উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস এই আলোচনা সভায় আয়োজন করে।সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার সময়ে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। জঙ্গীবাদ-মৌলবাদের বিষবাষ্পে জাতি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। মুসলমানদের অধিকার যেমন পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি তেমনি সনাতন ধর্মের জনগণের অধিকারও নিশ্চিত নয়। স্বাধীনতার সময়ে তাদের সংখ্যা ছিল ২৩ শতাংশ আর বর্তমানে তা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশেরও নিচে।তিনি আরো বলেন, ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি করার পর এখনো তা কেন বাস্তবায়ন হয়নি? কেন আদিবাসীদের তাদের অধিকার নিয়ে এখনো চিল্লাচিল্লি করতে হয়? কারণ ২০০১ সালের পর আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম শান্তি চুক্তির কথা। যিনি এই চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন তাকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি  গোলাম কুদ্দুস বলেন, সংবিধানের দৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষ সমান। তাদের সবার অধিকার এক ও অভিন্ন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীরাও সমভাবে অংশগ্রহণ করেছে। তাহলে কেন তাদের অধিকার নিয়ে এতো আলোচনা করতে হয়।তিনি আরো বলেন, তাদের ভাষার অধিকারকে যদি আমরা স্বীকার না করি, তাদের সংস্কৃতিকে যদি আমরা লালন না করি, তাদের ভূমি অধিকারকে যদি আমরা না মানি, তাহলে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এই কথা আর খাটবেনা।অনুষ্ঠানে নাজমুল হক প্রধান এমপি বলেন, আদিবাসীদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র সবদেশেই চলমান। এর আগেও বিভিন্ন দেশে এ ধরনের অনেক আন্দোলন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আদিবাসীদের মুক্তির জন্যে সবধরণের ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।সভাপতির বক্তব্যে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আশা করি সচিবালয় থেকে `আদিবাসী শব্দটা আপনারা আর ব্যবহার করবেন না`। এ ধরণের কোন নির্দেশনাপত্র আর বের হবে না। যদি বের হয়, তাহলে ঐ নির্দেশনা পত্রে যে কর্মকর্তা স্বাক্ষর করবেন তাকে সচিবালয় থেকে বের করে দেয়ার সময় এখন এসেছে।মতবিনিময় সভায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সঞ্জীব দ্রং। এ সময় তিনি আদিবাসীদের হয়ে ৬টি দাবি তুলে ধরেন।  এগুলো হলো- আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসা, সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্র ও আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন ও ১৬৯ অনুস্বাক্ষর করা, সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন এবং আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়ন।অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য ফজলে হাসান আবেদের সভাপতিত্বে ও  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামালের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- কবি কাজী রোজি এমপি, এ কে এম ফজলুল হক এমপি, মৃণাল কান্তি দাশ এম পি, গোলাম মুস্তফা বিশ্বাস এমপি, টিপু সুলতান এমপি, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট সদস্য সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।এমএইচ/আরএস/আরআইপি

Advertisement