দেশজুড়ে

স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে গণধর্ষণের পর উলঙ্গ ছবি তুললো ওরা

টাঙ্গাইলে গণধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা করায় বাদীকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাতাব্বরদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের ফুচকিয়া গ্রামে। মামলার বাদী ও ধর্ষিতা (২৫) এ অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় ৯ জুলাই ধর্ষিতা বাদী হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

Advertisement

বাদী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, দারিদ্র্যতার কারণে স্বামীর সংসার টেকাতে পারেননি তিনি। বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে স্থানীয় আলাউদ্দিন টেক্সটাইল মিলে কাজ করে কোনো রকমে জীবন চালাচ্ছিলেন। কিন্তু স্বামী পরিত্যাক্তা শব্দটি তার জীবনে অভিশাপ ডেকে আনে।

স্থানীয় বখাটেরা তার কর্মস্থলে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিতো। তিনি নিরবে সহ্য করে কোনো রকমে দিন কাটাতেন। দরিদ্র বাবার আলাদা ঘর না থাকার কারণে প্রতিবেশী একজনের বাড়িতে আশ্রয় মেলে তার। আশ্রিত বাড়িতে একজন অসুস্থ বৃদ্ধ মহিলা ছাড়া আর কেউ থাকতেন না। এ সুযোগটাই কাজে লাগায় ধর্ষকরা।

গত ৩ জুলাই দিবাগত রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ফুচকিয়া গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে মো. রাজু (২৮), মো. রফিকের ছেলে মো. রুবেল (২২), মো. ময়েজ উদ্দিনের ছেলে মো. পারভেজ (২০), আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. সুমন (২৫), জয়নাল আবেদিনের ছেলে জাহাঙ্গীর (২০) এবং ক্ষুদিরামপুর গ্রামের মৃত রজব আলী ফকিরের ছেলে আব্দুল ওহাব (২২) এবং রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. সোহান (১৯) জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

Advertisement

শুধু তাই নয় বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এলাকার সুভ্রত নামের এক যুবককে বিবস্ত্র অবস্থায় ধর্ষিতার পাশে বসিয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তোলে। এসময় ধর্ষকরা ধর্ষিতাকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায়। ধর্ষণের কথা কাউকে জানালে সেই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয় তারা।

এসময় তার ডাক চিৎকারে আশ্রয়দাতা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে স্থানীয় ডাক্তার দ্বারা তাকে চিকিৎসা করানো হয়। ঘটনার পরদিন থানায় মামলা করতে গেলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ধর্ষিতার কাছে বিস্তারিত শুনে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

মামলা দায়েরের পর থেকেই ধর্ষকরা তাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তার কর্মস্থলে যেতেও বাধা প্রদান করছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনার পর স্থানীয় মাতব্বররা তাকে গ্রাম ছাড়াও করেছে। বর্তমানে তিনি অন্য জায়গায় বসবাস করছেন।

মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় মাতব্বর রফিকুল ইসলাম, হায়দার আলী গংরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য ধর্ষিতাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ওই মাতব্বরের ছেলেও গণধর্ষণ মামলার আসামি বলে জানা গেছে। ধর্ষিতার কর্মস্থলে যাওয়ার পথেও আসামিরা ও তাদের দোষররা হুমকি ধামকি দিচ্ছে। ন্যায় বিচার ও জীবন নিয়ে শঙ্কায় থাকার কথাও জানান তিনি।

Advertisement

এ প্রসঙ্গে আশ্রয়দাতা হাজেরা খাতুন বলেন, ঘটনার দিন অনেক সময় ধরেই তার ডাক চিৎকার শুনেছি। আমি কোনোভাবেই ঘরের দরজা খুলতে পারছিলাম না। পাষণ্ডরা আমার ঘরের বাইরের দিক থেকে কাঠের ঠেকনা দিয়ে আমাকে ঘরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো। দীর্ঘক্ষণ দরজা ধাক্কাধাক্কি করার পর ঠেকনাটি সরে যায়। তারপর আমি তাকে উদ্ধার করি। এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় ধর্ষিতার পরিবার ও এলাকাবাসী।

আরিফ উর রহমান টগর/এমএএস/এমএস