আন্তর্জাতিক

হিরোশিমার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন কেকো

জাপানের হিরোশিমা শহরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনবিক বোমা হামলার সত্তর বছর পূর্তি পালিত হচ্ছে বৃহস্পতিবার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকেই মার্কিনিরা যুদ্ধের সমাপ্তি টানার জন্য হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো জরুরি হয়ে পড়েছিল বলে দাবি করে আসছে।মার্কিনিদের দাবি, হিরোশিমায় হামলার মাধ্যমে তারা হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল। জাপানের ওই দুটি শহরে আণবিক বোমার বিস্ফোরণ এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এক লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কেকো ওগুরা হিরোশিমা বোমা হামলার একজন ভূক্তভোগী। এখন তিনি আমেরিকার ওইদাবির বিরুদ্ধে নিজের মতামত জানাচ্ছেন।কেকো ওগুরা (৭৮) এখন চাইলে দারুণ একটি অবসর জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এই ভূক্তভোগী এখন দারুণ ব্যস্ত। নিজের চোখে দেখা আণবিক বোমা হামলার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন মানুষের মাঝে। ১৯৪৫ সালের ৬ অাগস্ট যখন প্রথম পারমাণবিক বোমাটি বিস্ফোরিত হয়, তখন হিরোশিমার শহরতলীতে নিজের বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন কেকো।তিনি বলেন, অবর্ণনীয় শব্দ আর তীব্র আলোকচ্ছটা ঘিরে ধরে আমাকে। আমি ছিটকে রাস্তায় পড়ে যাই। তারপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।কোকো ওগুরা আরো বলেন, তাদের চামড়া খুলে খুলে পড়ছিল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো গায়ের সঙ্গে একটি চাদর বা অন্য কিছু জড়িয়ে আছে এবং ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু আসলে সেটি ছিল তাদের গায়ের চামড়া এবং খুলে পড়ে যাওয়া ঠেকাতে তারা ধরে রেখেছিল। হঠাৎ কেউ একজন আমার পা জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, আমাকে পানি দাও। তারপর সবাই একসাথে বলতে শুরু করলো, পানি দাও, পানি দাও। আমি তখন আমাদের কুয়া থেকে পানি তুলে আনলাম, এবং তাদের খেতে দিলাম। বেশিরভাগই পানি পান করে আমাকে ধন্যবাদ দিল। কিন্তু কয়েকজন পানি পান করার পরপরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো।এ ঘটনার অনেক বছর পর কেকো আমেরিকা সফরে যান, পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে যাওয়া একজন হিসেবে তার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে। কিন্তু সেখানে যেসব আমেরিকানের সাথে দেখা হয় তার, তাদের সাথে কথা বলে এবং জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলা সম্পর্কে তাদের ধারণা শুনে রীতিমত ধাক্কা খান তিনি।কারণ তাদের সবার ধারণা, আণবিক বোমা হামলা করে তারা জাপানিদের বাঁচিয়েছে। এমনকি আমেরিকার কোন টেলিভিশন বা গণমাধ্যমে বোমার শিকার মানুষদের নিয়ে কোন সংবাদ তিনি দেখতে পাননি।ওই হামলায় দগ্ধ আহত-নিহত নারী ও শিশুদের বেশিরভাগ তথ্যচিত্র আমেরিকানরা গোপন করে রাখে এবং ১৯৮০`র দশক পর্যন্ত এসব ভিডিও ও ছবি গোপন নথি হিসেবেই ছিল।হিরোশিমার যে স্থানটিতে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল সেখানে এখন তৈরি হয়েছে পিস পার্ক। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন কিকো। এদের সবাই এই প্রথমবারের মতো একজন হিরোশিমা ভূক্তভোগীর মুখোমুখি হয়েছে।এসআইএস/এমআরআই

Advertisement