গেল বছরের শেষদিকে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে বর্ণাঢ্য এক মহরতের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘নোলক’ নামের ছবিটি। ঘোষণা দেয়া হয় সেটি পরিচালনা করবেন রাশেদ রাহা। গেল ১ ডিসেম্বর থেকে টানা ২৮ দিন ছবির শুটিংও হয়েছে ছবিটির ভারতের হায়দরাবাদ রামোজি ফিল্ম সিটিতে।
Advertisement
সেখানে অংশ নিয়েছেন শাকিব খান, ববি, ওমর সানি, মৌসুমী, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, রেবেকা, কলকাতার রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্তসহ আরও অনেকেই।
কিন্তু এবার ‘নোলক’ ছবির পরিচালক রাশেদ রাহা, সিনেমাটি থেকে অন্যায়ভাবে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে প্রযোজকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। আজ রোববার বিকেলে ছবির প্রযোজক সাকিব ইরতেজা চৌধুরী সনেটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রযোজক-পরিবেশক সমিতিতে অভিযোগ দায়ের করেন রাশেদ রাহা।
এই নির্মাতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এত আয়োজন করে একটি ছবি শুরু করলাম। সবাই অপেক্ষায় আছে ছবিটি মুক্তির। আর কিছু কাজ মাত্র বাকী। এমন সময় প্রযোজক ছবিটি থেকে আমাকে সরিয়ে অন্যজনকে দিয়ে দিলেন পরিচালনা করতে।’
Advertisement
কে সেই পরিচালক জানতে চাইলে রাশেদ রাহা বলেন, সেই পরিচালক হলেন ইফতেখার চৌধুরী। রাশেদ পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীর বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সাথে যা করা হচ্ছে সেটি অন্যায়। একটি সিনেমা একজন পরিচালকের কাছে সন্তানের মতো। তার কাছ থেকে সেই সিনেমা কেড়ে নেয়া সন্তান ছিনতাইয়ের মতোই অপরাধ। প্রযোজকের যদি এতোই ইচ্ছে উনাকে দিয়ে ছবি বানানোর তবে সেটি আগেই করতে পারতেন বা অন্য কোনো ছবি দিতে পারতেন। আমি শাকিব ভাইয়ের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছি।’
এদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি এবং বাংলাদেশ প্রযোজক-পরিবেশক সমিতিতে দেওয়া অভিযোগে রাশেদ রাহা লিখেন, ‘যথাবিহীত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি রাশেদ রাহা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির একজন সদস্য। আমি ২৩/১১/২০১৭ তারিখে ‘নোলক’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে নিবন্ধন করি। দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে বর্ণাঢ্য মহরতের মাধ্যমে আমার ওপর ছবিটি পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। শতভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে ইতোমধ্যে ছবির ৮৫ ভাগ শুটিং সম্পন্ন করেছি। গত ১ ডিসেম্বর থেকে টানা ২৮ দিন ছবির শুটিং হয়েছে ভারতের হায়দরাবাদ রামোজি ফিল্ম সিটিতে। অভিনয়শিল্পীরা ছিলেন-শাকিব খান, ববি, ওমর সানি, মৌসুমী, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, রেবেকা, কলকাতার রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত, অমিতাভ ভট্টাচার্য প্রমুখ।’
রাশেদ রাহা আর লিখেছেন, ‘ছবির বাকি অংশের শুটিং করার জন্য আমি অনেকদিন থেকেই প্রস্তুত। কিন্তু মাসখানেক আগে এ ছবির প্রযোজক সাকিব ইরতেজা চৌধুরী (সনেট)-এর পক্ষ থেকে বাকি অংশের শুটিংয়ের জন্য পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করতে বলা হয়। ছবির নির্মাণকৌশল ও গোপনীয়তা বজায় রাখার স্বার্থে কারও সঙ্গে পরামর্শ করতে আগ্রহী ছিলাম না। বিভিন্ন সূত্রে হঠাৎ জানতে পারি, আমাকে ছাড়াই পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীকে দিয়ে নোলক ছবির বাকি অংশের কাজ শেষ করার জন্য প্রযোজক ইতোমধ্যেই একটি দল নিয়ে গতকাল (২১ জুলাই) কলকাতায় পৌঁছেছেন। পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে আমার অজ্ঞাতে’।
এ অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছেন স্বীকার করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে অভিযোগপত্রটি হাতে এসেছি। অভিযোগ পাওয়ার পর আমি ইফতেখার চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। সে বর্তমানে ভারতে রয়েছে। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।’
Advertisement
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেয়া যাবে জানতে চাইলে পরিচালকদের মহাসচিব বলেন, ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া যাবে। একটা ছবির মূল পরিচালক যদি ছবি করতে আগ্রহী না হয়, সেক্ষেত্রে প্রযোজক অন্য পরিচালক দিয়ে ছবি শেষ করতে পারেন। কিন্তু পরিচালকের অনুমতি ছাড়া অন্য পরিচালককে দিয়ে ছবির শেষ করার কোনো নিয়ম নেই। এমন অনিয়মের প্রমাণ পেলে ইফতেখার চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল হয়ে যেতে পারে। এটা আমাদের মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব।’
অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ‘নোলক’ ছবির প্রযোজক সাকিব ইরতেজা চৌধুরী সনেটের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এলএ/জেআইএম