বিনোদন

নতুন শিল্পীদের জন্য কনক চাঁপার ২৪ পরামর্শ

বাংলা সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি কণ্ঠ শিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। চলচ্চিত্র, আধুনিক গান, নজরুল সঙ্গীত, লোকগীতিসহ প্রায় সবধরনের গানে তিনি সমান পারদর্শী তিনি। বাংলাদেশের প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে তার আসন অনেক উঁচুতে। ৩২ বছরেও বেশি সময় ধরে দেশের সংগীতকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন তিনি। শুধু চলচ্চিত্রেই তিন হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ৩৫টির অধিক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার। জনপ্রিয় গানের তালিকা করলে সেটাও হবে বেশ দীর্ঘ।

Advertisement

গান গাওয়ার পাশাপাশি ছবি আঁকা ও লেখালেখিতেও বেশ সজীব তার হাত। নিজেকে কখনই গুটিয়ে রাখেন না মিষ্টি হাসির এই মানুষটি। বরাবরই তরুণ শিল্পীদের পাশে থেকে তাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে শিল্পী মায়ের মতো ভূমিকা পালন করেন। ফেসবুকেও বেশ সরব কনক চাঁপা। সম্প্রতি ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তরুণ শিল্পীদের উদ্দেশ্যে। একজন প্রকৃত শিল্পীর কী কী গুণ থাকা উচিৎ তিনি তুলে ধরেছেন সেখানে। শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন যারা লালন করছেন মনে প্রাণে তাদের ২৪টি গুন রপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন এই গুণি শিল্পী।

কনক চাঁপা বলেন,‘আপনারা নানা সময়ে আমার কাছে কিছু উপদেশ শুনতে চেয়েছেন । আমি আসলে উপদেশ দেয়ার মত কেউ নই, তবে লম্বা সময়ে গানের সাথে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা বলা যেতেই পারে।’ তরুণ শিল্পীদের উদ্দেশ্যে কনক চাঁপা বলেন-

১.প্রথমতঃ আপনার অবশ্যই গান ধারণ করার মত কন্ঠ থাকতে হবে । ২. একজন সম্যক জ্ঞান সম্পন্ন গানের ওস্তাদ এর কাছে গান শিখতে হবে ধৈর্যের সাথে নিয়মাবলী মেনে। ৩.বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বানান , প্রক্ষেপণ পরিষ্কার হওয়ার মত শিক্ষা থাকতে হবে বা সেই শিক্ষা নিতে হবে।ভেবে দেখেন আমাদের দেশের নামকরা শিল্পীরা কখনোই তাঁর গানে গ্রামের ভাষা টেনে আনেন না।

Advertisement

৪. তাল বুঝতে হবে। তালকানা কখনোই গাইতে পারেনা। ৫.অসীম ধৈর্যের শক্তি নিয়ে এ পথে নামতে হবে। ৬. বুঝতে হবে শিল্পী পেশা অন্য পেশার চাইতে আলাদা।পয়সার হিসাব না করে তালের লয় মাত্রা বুঝলে বেশী উপকার হবে। ৭. শিল্পীকে নিজের সাথে, নিজের পেশার সাথে অসম্ভব সৎ থাকতে হবে। ৮. কোন রকম ওজর আপত্তি ছাড়াই রেয়াজ করতে হবে। ৯.শরীরের সুস্থতা অনেক বড় করে দেখতে হবে। ১০. বিনোদনকারী, গায়ক, কন্ঠশিল্পী, শিল্পী এগুলো একেকটা ক্যাটাগরি। আপনি কোনটা হবেন তার ফোকাস আপনাকেই করতে হবে।

১১. সহজে নাম করার জন্য ছলচাতুরী মার্কা বুদ্ধি বের না করে সহজ পথে গলা সেধে ভালো করে শিখে এই পথে নামলেই বরং শিল্পী বা কন্ঠশিল্পী হওয়ার কাজ সহজ হয়।শিল্পীদের আসলে ছলচাতুরী মানায়না। ১২. সহজে স্টার হলে একদিন ঠিক অতি সহজেই মানুষ ভুলে যায়।পাবলিক দারুন কঠিন চীজ বটে।তারা ভালো মন্দ খুব ভালো চেনেন। ১৩. গানের বিনিময়ে পয়সার জন্য ছুটবেন না।ভালো করে গান শেখেন, অধ্যবসায় করে গান ধারণ করুন, পয়সা একসময় আপনার পিছনে ছুটবে। ১৪. নিজের গান নিয়ে মানুষের ইনবক্সে ইনবক্সে দৌড়াবেন না।এতে মানুষ হয়তো ভালো কমেন্ট করে কিন্তু আসলে বিরক্ত হয়।জোর করে গান শোনানো যায়না বরং এতে শিল্পী কে ভিক্ষুকের মত দেখায়।

১৫. সময় নিয়ে ভালো কথার ভালো সুরের ভালো গান তৈরী করুন।আজ না হোক কাল সেই গান মানুষ শুনবেই। ‘গান খাওয়ার’ উদ্দেশ্য নিয়ে গান তৈরী করবেন না।গান আসলেই মন, কান ,হৃদয় শোনে।গান হোঁচট বা উষ্টা খাওয়ার জিনিস নয়। ১৬. নাম করার জন্য যেখানে সেখানে গান গাইবেন না।গান আপনার সম্পত্তি নয়।স্রষ্টার দেয়া আমানত।সেই আমানত আপনি ভুল জায়গায় ব্যাবহার করবেন না। ১৭. সম্মানী ছাড়া কোথাও গাইবেন না।শ্রোতাদের সামনে নিজেকে খেলো করবেন না।

১৮. গান খুব অভিমানী। গানের সাথে বাজে অনৈতিক কিছু মেলাবেন, গান আপনাকে ছেড়ে দূরে চলে যাবে। ১৯. নিজের পেশাকে সম্মান করুন।জেনে রাখবেন সবাই গাইতে চান, সেই ক্ষমতা পান খুব অল্পসংখ্যক মানুষ। এক কোটি মানুষের মাঝে শিল্পী হন আসলে একজন! ২০.ফেসবুকে গান ভাইরাল করার চেষ্টা না করে গান আকাশে বাতাসে ছড়ানোর চেষ্টা করুন। ফেসবুক ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা আসল জনপ্রিয়তা নয়।যখন দেখবেন পানের দোকান, পাড়ার অনুষ্ঠানে আপনার গান বাজছে তখন বুঝবেন আপনার গান সত্যিকারের ছড়িয়ে গেছে। নিজকে মিথ্যা শান্তনা দিয়ে লাভ?

Advertisement

২১. স্পষ্ট উচ্চারণ স্পষ্ট সুরর গান করুন। গানের কথা গানের মাধ্যমে শ্রোতাদের কানে পৌঁছে দেয়া আপনার দায়িত্ব। গানের কথা তো আর লিখে লিখে শ্রোতাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে পারবেন না। ২২. শিল্পীকে খুব ভালো মানুষ হতে হয়। শিল্পীদের ভুলভাল নিয়ে সাধারণ মানুষরা খুবই বিচলিত থাকেন। তারা শিল্পীদের ভালো মানুষ হিসেবে দেখতে ভালবাসেন।এই ভালবাসার মূল্য অনেক। তাই ভুল কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। সামান্য ভুলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয় স্টার এর নামধাম ধুলায় মিশে যাওয়ার উদাহরন হাজার হাজার আছে।

২৩. গানকে রাজমুকুট না পরাতে পারেন কিন্তু তাই বলে তাকে স্যন্ডো গেঞ্জি পরাবেন না। গানের উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যান।গান কে নীচে নামাবেন না। ২৪. ভালো করে নিজে শুনে দেখেন আপনার কন্ঠে মানুষের মনে প্রশান্তি আনার মত সুর আছে কিনা! সত্যি সত্যিই নিজের কন্ঠের প্রতি সুবিচার করুন।সেরকম কন্ঠ না হলে গান গেয়ে মানুষকে জ্বালাবেন না! গান গাইতেই হবে এমন কোনও কথা নেই।ভালো শ্রোতাদের ও অনেক সম্মান আছে।

এমএবি/এলএ/এমএস