কৃষি ও প্রকৃতি

খলিশা মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা

তিন বছর গবেষণার পর দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছেন। তারা খলিশা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছেন। ফলে মাছটি চাষাবাদের জন্য পোনাপ্রাপ্তি সহজ হবে। এতে প্রজাতিটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

Advertisement

ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, ইনস্টিটিউট থেকে ইতোমধ্যে ১৮টি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। এরমধ্যে পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা, মহাশোল অন্যতম। সম্প্রতি পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা জাতীয় মাছের প্রাপ্যতা বাজারে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, এসব মাছের ক্রয়মূল্য সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে আছে। পর্যায়ক্রমে সব বিলুপ্তপ্রায় মাছকে খাবার টেবিলে ফিরিয়ে আনার জন্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

> আরও পড়ুন- জ্যৈষ্ঠ মাসে মাছচাষিরা যা করবেন

Advertisement

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ইনস্টিটিউটের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্র থেকে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ গবেষণায় গবেষক হিসেবে ছিলেন সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রাশিদুল হাসান এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শওকত আহমেদ।

বিগত ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্বাদুপানি উপকেন্দ্র সৈয়দপুর প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে খলিশা মাছ সংগ্রহ করে পুকুরে ব্রুড প্রতিপালন, ডিম ধারণ ক্ষমতা নির্ণয়, সঠিক প্রজননকাল চিহ্নিতকরণসহ অন্যান্য গবেষণা পরিচালনা করে আসছে।

গবেষণায় দেখা যায়, পুকুরে ৮-১০ সে.মি (১৫-২০ গ্রামের) খলিশা মাছ পরিপক্ক হয়ে থাকে। মাছটির বয়স, আকার ও ওজন আনুপাতে ডিম ধারণ ক্ষমতা ৫ হাজার থেকে ১৩ হাজার। এর প্রজননকাল মে থেকে সেপ্টেম্বর। সে আলোকে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে গত ১২ জুলাই মাছটির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কলাকৌশল উদ্ভাবনে সাফল্য লাভ করেন।

> আরও পড়ুন- দেশীয় কার্পের সঙ্গে শিং-কৈ মাছের মিশ্র চাষে বাড়বে উৎপাদন

Advertisement

গবেষকরা জানান, প্রজনন মৌসুমের আগেই প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে কিশোর বয়সের মাছ সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে ব্রুড তৈরির জন্য প্রতিপালন করা হয়। প্রজনন মৌসুমে পরিপক্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছ পুকুর থেকে সংগ্রহ করে হ্যাচারি ট্যাংকে ৫-৬ ঘণ্টা রাখা হয়।

পরবর্তীতে হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগের ১৩-১৫ ঘণ্টা পর মা খলিশা মাছ ডিম দেয়। এরপর ২০-২২ ঘণ্টা পর ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপন্ন হয়। তবে মাছটিকে খাবারের মাছ ছাড়াও অ্যাকোরিয়াম মাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আতাউল করিম খোকন/এসইউ/এমএস