রাজনীতি

কোটা ইস্যুতে ছাত্রলীগকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী : কাদের

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের নামে বাড়াবাড়ির অভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।’

Advertisement

রোববার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের নামে কিছু বাড়াবাড়ির অভিযোগ আমরা পেয়েছি। কাল (শনিবার) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা শেষে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে আমার সামনে ছাত্রলীগের নেতাদের বলেছেন, ছাত্রলীগের নামে যেন কোনো বাড়াবাড়ির অভিযোগ তিনি না পান।’

কাদের বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। যাতে ছাত্রলীগের নামে আর কোনো বাড়াবাড়ি, কোনো অভিযোগ যেন আমাদের কাছে না আসে।’

Advertisement

এদিকে শনিবারের প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্মরণাতীতকালের স্মরণীয় একটা গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান করেছি। এক বড় অনুষ্ঠান কিন্তু কোথাও শৃঙ্খলা ভঙ্গের একটা নজিরও নেই। আমরা এটা প্রমাণ করেছি যে আওয়ামী লীগই এখনও সবেচেয়ে সুসংগঠিত, সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, স্বতঃস্ফূর্ত পার্টি, সবচেয়ে স্মার্টার পার্টি হিসেবে গতকাল আমরা নিজেদের ডেমোনেস্ট্রেট (প্রদর্শন) করেছি।’

জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে অনুষ্ঠানটি শনিবার করা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা চেষ্টা করেছেন মিছিলের পাশে যাতে ট্রান্সপোর্ট চলাচল করতে পারে। সে ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেতন ছিলাম। তারপরও যদি জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে যদি কারও দুর্ভোগের কারণ সৃষ্টি করে সেজন্য আমি সকলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়। গত ২ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের হাতুড়ি ও লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম।

বিএনপির ‘নতুন সুরে’ সহিংসতার আশঙ্কা কাদেরেরএদিকে একই সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করার দাবিকে দলটির ‘নতুন সুর’ উল্লেখ করে এতে সহিংসতা-নাশকতা আশঙ্কা করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আপনি ইলেকশন করবেন না, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংতার যে দৃশ্যপট দিয়েছেন তা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। গণতন্ত্র রক্ষা করার নামে সহিংসতার এরকম ভয়াবহ ছবি এদেশ কখনো দেখেনি। এতদিন শুনেছিলাম যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, এখন তারা আবার নতুন করে সুর তুলেছেন যে বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। তার চেয়েও এককাঠি এগিয়ে গিয়ে বলেছেন নির্বাচন তারা প্রতিহত করবেন। কাজেই এর মধ্যে বেসুরো আওয়াজ আছে এর মধ্যে চক্রান্তের একটা গন্ধ আছে, এর মধ্যে সহিংসতা-নাশকতা আশঙ্কা আমরা করছি।’

বিএনপি সহিংসতা দিকে গেলে আপনারা কী করবেন- জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ভরসা মহান আল্লাহপাক আর দেশের জনগণ। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা প্রতিহত করবো। আমরা অনেক কনফিডেন্ট ২০১৪ সালে যা হয়েছে সেটার পুনরাবৃত্তি এবার বাংলাদেশে ঘটবে না। সেটা ঘটতে দেয়া হবে না।’

বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটা বিএনপির ব্যাপার। তবে আমি বারবারই একটা কথা বলি- ইলেকশন বিএনপির জন্য দয়ার দান নয়, সরকারি দলের অনুদান নয়, এটা বিএনপির অধিকার। আপনি আসবেন না নির্বাচন কি থেমে থাকবে, গণতন্ত্র কি থেমে থাকবে।’

বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উদ্যোগের কী আছে, তারা নির্বাচনে আসার ব্যাপারে বাধা তো নেই, উদ্যোগের প্রয়োজন নেই। এটা তাদের অধিকার, বিএনপি কি অনুগ্রহ চায়। নির্বাচন নিয়ে সংলাপের তো প্রয়োজন নেই।’

নির্বাচনে যেতে বিএনপি কিছু শর্ত দিয়েছে- এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোনো শর্তযুক্ত নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ইলেকশন হবে, শর্তের কোনো প্রয়োজন নেই।’

সংলাপের প্রয়োজন অনুভব করছি নারাজনৈতিক সংকট নিরসনে অনেকে সংলাপের কথা বলছেন- এ বিষয়ে কাদের বলেন, ‘সংলাপ তো হয়েছে, ইলেকশন কমিশন সংলাপ করেছে। বিএনপির সাথেও সংলাপ করেছে, এখানে আমাদের কোনো বিষয় নেই। ইলেকশন কমিশন সংলাপ করবে কিনা, সেটা তারা ঠিক করবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনো সংলাপের প্রয়োজন অনুভব করছি না। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যে সেটার জন্য সংলাপ করতে হবে।’

নির্বাচনকালীন সরকার অক্টোবর মাসে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার ছোট হবে তবে কতটা ছোট হবে তা প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন।’

এবার অন্য কোনো দলকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘গতবার যেটা ছিল, পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব যাদের আছে, তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত অফার করা হয়েছিল, এবার সেই স্কোপ নেই।’

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সভা-সমাবেশ করার জন্য যে স্পেস দরকার সেই স্পেস দেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি থাকবে না। সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি থাকবে না। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

আরএমএম/বিএ/পিআর