থলের বিড়াল অবশেষে বের হতে শুরু করেছে। রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই কেন আর্জেন্টিনাকে বিদায় নিতে হয়েছিল, তার আসর কারণ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তখনই জানা গিয়েছিল, দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি। যদিও খুব কৌশলে সেই ঘটনা দামাচাপা দেয়া হয়েছিল। তবে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর আর চাপা রাখা গেলো না অন্তর্কোন্দলের বিষয়টি। আর্জেন্টিনার সাংবাদিকের সৌজন্যে ঘটনাটা এবার চলে এলো সবার সামনে।
Advertisement
যা ঘটনা বেরিয়ে আসছে তাতে জানা যাচ্ছে, ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর কোচ হোর্হে সাম্পাওলির প্রতি প্রকাশ্যেই অনাস্থা দেখিয়েছিলেন লিওনেল মেসি এবং তার সতীর্থরা। কোচকে তারা নাকি সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘আমরা আর আপনাকে বিশ্বাস করি না।’
লিওনেল মেসির মত বিশ্বসেরা একজন ফুটবলার, সঙ্গে একঝাঁক তারকা নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে এসে আর্জেন্টিনার এতটা বাজে পারফরম্যান্স করার কারণ খোঁজা হচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। কেন এত বাজেভাবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো আর্জেন্টিনাকে! যারা নিজেদের প্রথম ম্যাচে নবাগত আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে। এরপর ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারে ৩-০ গোলের ব্যবধানে। শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে কোনোমতে হারিয়ে ওঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে। তবে, দ্বিতীয় রাউন্ডে এসে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় মেসিদের দল।
তবে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পরই দলের মধ্যে কোন্দলের বিষয়টি প্রকাশ্যে উঠে এসেছিল। তখনই জানা গিয়েছিল, ‘কোচের সঙ্গে মেসিসহ অনেক খেলোয়াড়েরই সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না।’ শেষ পর্যন্ত সে ঘটনাই সত্যি হতে যাচ্ছে। আর্জেন্টিনার ওই সাংবাদিকের দাবি অনুযায়ী, ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ ব্যবধানে হারের পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল মেসিদের শিবির।
Advertisement
অ্যারিয়েল সেনোসিয়ান নামে টিওয়াইসি’র এক বিখ্যাত আর্জেন্টাইন সাংবাদিক এবং ওলে পত্রিকায় কলাম লেখক, ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছেন। মুন্দিয়াল এজ হিস্টোরিয়াস নামে লেখা ওই বইতেই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন অ্যারিয়েল সেনোসিয়ান। সেখানে রয়েছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ওই বইয়ে রয়েছে, ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ হারের পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল মেসিদের শিবির।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারের পরই কোচ হোর্হে সাম্পাওলির সঙ্গে এক রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি এবং সিনিয়র ফুটবলার হ্যাভিয়ের মাচেরানো। কোচের সঙ্গে ছিলেন তার দুই সহকারী সেবাস্তিয়ান বেকাসেসে এবং লিওনেল স্কালোনি।
ওই বৈঠকেই কোচ হোর্হে সাম্পাওলিকে লিওনেল মেসি জানিয়ে দেন, ‘আপনি কী বলছেন, সেটা টিম বুঝতে পারছে না। আমরা আর আপনাকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমরা নিজেদের মতামতও জানাতে চাই।’
সাম্পাওলি খেলোয়াড়দের এই বিদ্রোহে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কোন বিষয়ে মতামত জানাতে চান ফুটবলাররা? তার জবাবে মেসি এবং মাচেরানো বলেন, ‘সব বিষয়ে।’ মেসি সে সময়ে কিছু বক্তব্য রেখেছিলেন। সাম্পাওলি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, মেসি কোন ফুটবলারদের দলে চান? তাতে মেসি বিরক্তই হন।
Advertisement
কোচকে তখন তিনি বলেন, ‘আপনি আমাকে ১০ বার জিজ্ঞাসা করছেন, আমি কোন ফুটবলারকে দলে চাই। আমি তো আপনাকে কখনও কোনও নাম বলিনি!’
এই পুরো ঘটনার সাক্ষী ছিলেন আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়া। তিনি জানতেন ফুটবলাররা কী চায়। তাই তাপিয়া সাম্পাওলিকে পরামর্শ দেন, ফুটবলারদের দাবি মেনে নিতে। পরে নাইজিরিয়া ম্যাচে ভালো শুরুর পর বিষয় কিছুটা ধামচাপা পড়লেও কখনওই পুরোপুরি তা থেমে যায়নি। সাম্পাওলির এক সহকারী বেকাসেসে ওই সময় ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তাকে আটকান সাম্পাওলি নিজে।
রাশিয়ায় ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পরে ফুটবলারদের সঙ্গে সাম্পাওলির একটি জরুরি বৈঠকের খবর নিয়ে ফুটবল বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখন ফুটবলাররা এবং আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা জানিয়েছিল, পুরোটাই মিডিয়ার ফাঁদা গল্প। এর মধ্যে কোনও সত্যতা নেই। এখন আর্জেন্টিনার প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকের বই বাজারে চলে আসার পরে কী ভাবে বিতর্ককে ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব হবে, সেটাই প্রশ্ন।
আইএইচএস/জেআইএম