দেশজুড়ে

বিএনপির পরিবর্তনে কঠিন সমীকরণের মুখে কামরান

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার মাঝপথে এসে আচমকা ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম।

Advertisement

আচমকা বিএনপির এ ঐক্যের কারণে এতদিন নির্ভার থাকা আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান কঠিন সমীকরণের মুখে পড়েছেন।

এদিকে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কর্মী সমর্থকরা আছেন ফুরফুরে মেজাজে। তবে এখনও আরিফের গলার কাটা হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম জামায়াত সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তার কারণে আরিফ শিবিরে অস্বস্তি কম নয়।

তবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার প্রথম ১০ দিন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পরোক্ষভাবে এগিয়ে রয়েছেন এমনটা আশা করেছিলেন ভোটাররা। কিন্তু শেষ সময়ে বিএনপির বিরোধ মিটিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমের আরিফকে সমর্থন জানানোয় এখন বিএনপি-আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। আরিফ-কামরান এখন সমানে সমান।

Advertisement

এসব কারণে আওয়ামী লীগ বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামলেও স্বস্তিতে নেই কামরান। এই অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে ১৪ দল নেতাদের দায়সারা আচরণ।

তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোটের মাঠ গরম করে রেখেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। পিছিয়ে নেই অন্য সব মেয়র প্রার্থীরাও। দলবলে ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। খাওয়া-দাওয়া ভুলে দিনরাত প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।

জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পৃথক দুটি জোটে রয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জোটের প্রার্থীদের পক্ষে শরিক দলগুলোর প্রচারণা অনেকটা দায়সারা। তবে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদলগুলোর বেশিরভাগ নেতাদের প্রচারণায় পাচ্ছেন না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সিসিক নির্বাচনে নিজেদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পরে কামরানকে সমর্থন দেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। জোটের পক্ষ থেকে সমর্থন দেয়া হলেও কামরানের পক্ষে মাঠে নেই তারা। তবে কয়েকটি নির্বাচনী জনসভা আর পথসভায় ১৪ দলের দু’একজন নেতাকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

Advertisement

২০০৫ সালে বাম প্রগতিশীল জোট ১১ দল, আওয়ামী লীগ, জাসদ ও ন্যাপ মিলে ১৪ দল গঠিত হয়। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে জোটটিতে এখন ১৩টি দল রয়েছে। তবে সিলেটে অধিকাংশ দলের অস্তিত্ব নেই। যে দলগুলো রয়েছে সেগুলোও কর্মী সংকটে ভুগছে। জোটের মধ্যে মোটামুটি ছয়টি দলের কার্যক্রম রয়েছে সিলেটে।

জোটের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় এখনও দেখা না যাওয়া প্রসঙ্গে গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী জানান, জোটের প্রার্থী হিসেবে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আগামী ২২ জুলাই জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেট আসবেন। তখন আমরা পুরোদমে প্রচারণায় নামব।

এদিকে, কামরানের সঙ্গে সিলেট-১ আসনের এমপি ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দূরত্ব দীর্ঘদিনের। এই দূরত্বের সুযোগে গত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে বিএনপি দলীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী সখ্যতা গড়ে তোলেন। নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নগরের রাস্তাঘাটের বেশ উন্নয়ন করে নগরবাসীর কাছে প্রশংসিত হন আরিফ। এ উন্নয়ন ও নগরের জলাবদ্ধতা কমিয়ে আনার কারণে নগরের তৃণমূলে আরিফের জনপ্রিয়তা রয়েছে। এটিও কামরানের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ব্যাপারে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে বিভিন্ন মতভেদ থাকতে পারে। অনেকে প্রার্থী হতে চাইতে পারেন। কিন্তু কোনো বিভক্তি নেই। সিলেট আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত। ৩০ তারিখের নির্বাচনেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কামরান বলেন, আমি কসমেটিক উন্নয়নে বিশ্বাসী নই। নগরের উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণসহ আমি বেশকিছু বড় প্রকল্প গ্রহণ করি। পরবর্তী মেয়র তা এগিয়ে নিতে পারেননি।

তবে এবার দলীয় মনোনয়ন কেনার আগেই কামরান ছুটে যান অর্থমন্ত্রীর ঢাকার বাসায়। দলের প্রবীণ এই নেতার ‘দোয়া’ নিয়েই দলীয় মনোনয়ন কেনেন কামরান। দল থেকেও আবার কামরানের ওপরই ভরসা রাখা হয়। আরও চার প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা সত্ত্বেও কামরানই দলীয় মনোনয়ন পান।

জানা যায়, কামরানকে মনোনয়ন দেয়ার পর দলীয় সভানেত্রী সিলেটের সব নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দেন। যেকোনোভাবেই হোক সবাইকে এক হয়ে মেয়র পদ পুনরুদ্ধারেরও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনার পর বিভেদ ভুলে কামরানের পক্ষেই মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সব নেতা। এখন পর্যন্ত সব নেতা ঐক্যবদ্ধভাবে কামরানের পক্ষে থাকলেও তারা কতটুকু আন্তরিক তা বোঝা যাবে ভোটের দিন।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। দলের সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তার পক্ষে রয়েছি। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের সুযোগ নেই।

২০১৩ সালে সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৭ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পান ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট। দুইজনের ভোটের ব্যবধান ছিল ৩১ হাজার ১৫৭।

তবে গত নির্বাচনে ১ লাখ ১০ হাজার ৫২২ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগই করেননি। বলা হয়ে থাকে, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া এসব ভোটারদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও কামরানের ভোটার।

এএম/জেআইএম