দেশজুড়ে

খাতা কেনার টাকা না থাকায় কাকলী পড়ত বেশি লিখত কম

বাবা গেছেন অন্যের জমিতে দিনমজুরির কাজে। বাড়ি ফেরার পথে শুনলেন মেয়ে উপজেলার মধ্যে সব থেকে ভালো ফলাফল করেছে। কিন্তু মেয়েকে যে মিষ্টিমুখ করাবেন সেই টাকা তো পকেটে নেই। শেষমেষ মসজিদে বিতরণ করা একটুকরো জিলাপি হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরে মেয়ের মিষ্টিমুখ করালেন।

Advertisement

গল্পটা এ বছর মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী কাকলী আক্তারের। এত ভালো ফলাফল করেও পরিবারটিতে নেই কোনো আনন্দ। উল্টো মেয়েকে এরপরে আর পড়াতে পারবেন কিনা সেই শঙ্কায় চোখের জল ফেলছেন পরিবার। কলেজের সহযোগিতায় বিনা খরচে লেখাপড়া করে জিপিএ-৫ অর্জন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় কাকলীর পরিবার।

জানা যায়, চলতি বছর এইচএসসির ফলাফলে জেলার শিবচর উপজেলার ৫টি কলেজের মধ্যে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ ৮৮.৫৯ ভাগ উত্তীর্ণ হয়ে শীর্ষ স্থান দখল করে এবং উপজেলার একমাত্র জিপিএ-৫ অর্জনধারী ওই কলেজের মেধাবী ছাত্রী কাকলী আক্তার।

দফায় দফায় পদ্মা নদী ভাঙনে আক্রান্ত কাকলীর নিঃস্ব পরিবারটির বসবাস উপজেলার পাচ্চরে একচালার একটি খুপড়ি ঘরে। ৫ ভাই বোনের সংসারে বাবা হারুন মাদবর দিনমজুর মা তাসলিমা বেগম গৃহিণী। অন্যের জমিতে বাবা হারুনের কামলা (দিনমজুরি) দিয়েই চলে সংসার।

Advertisement

ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী কাকলী এসএসসিতে পাচ্চর বালিকা বিদ্যালয় থেকে সংগ্রাম করে জিপিএ-৫ অর্জন করে। পরে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় ভর্তি ফি ছাড়াই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ কর্তৃপক্ষ কাকলীকে পড়ার সুযোগ দেন। এমনকি বেতনসহ যাবতীয় খরচ বিনামূল্য করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

যাতায়াতসহ বাকি খরচ চালাতে পাশের বাড়ির শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজেই চালাতো নিজের খরচ। দিনমজুর বাবা খাবার জোগাতেই হিমশিম খাওয়ায় টাকার অভাবে কলেজের মাত্র ৪টি বই কিনতে পারে কাকলী। অন্যের পুরাতন বই হাওলাদ করে পড়তে হয়েছে তাকে। বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় দিনের বেলাকেই বেশি বেছে নিতো পড়ার সময়। খাতা ফুরিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়তো বেশি, লিখতো কম। যাতায়াত ভাড়া না থাকায় অনেকদিন কলেজে যাওয়া বাদ দিতে হয়েছে তাকে।

মেয়েকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করলে মা তাসলিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কামলা দিয়ে ৭ জনের সংসার চালানোই কঠিন। রেজাল্টের পর মিষ্টিও খাওয়াতে পারি নাই মেয়েকে। ভাত জুটানোই কষ্ট। আমাগো সামর্থ নাই ওরে পড়ানোর। ও নিজে কষ্ট কইরা এই পর্যন্ত আইছে।’

বাবা হারুন মাদবর বলেন, ‘একদিন কাজ না করলে সংসারই চলে না। ও পড়ছে নিজেরডা দিয়াই। এহন ভাল জায়গায় পড়তে চায়। আমরা কেমনে কি করমু।’

Advertisement

অদম্য মেধাবী কাকলী আক্তার বলেন, ‘কলেজ ও স্কুলের স্যারদের সহযোগিতায় অনেক কষ্ট করেই পড়ছি। উচ্চশিক্ষা নেয়ার আমার খুব ইচ্ছা। কিন্তু আমার মা-বাবাতো পারে না। তাই জানি না কী আছে ভাগ্যে। তবে আমি পড়তে চাই।’

পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামছুল আলম বলেন, ‘কাকলী অদম্য মেধাবীদের মধ্যেও সেরা। ও এই উপজেলার এবারের একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। ওর পাশে সরকারসহ বিত্তবানরা এগিয়ে না এলে ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।’

ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাকলী আক্তার অদম্য মেধাবী। ওর পাশে আমরা শুরু থেকেই ছিলাম। সবাই ওর জন্য এগিয়ে এলে ও অনেক এগিয়ে যাবে।’

এফএ/এমএস