জাতীয়

বছরের উষ্ণতম দিন পেল ঢাকা

বৃষ্টি নেই। প্রচণ্ড রোদ। তীব্র গরম। ঘরে বৈদ্যুতিক পাখায়ও তাপ কমছে না। বাইরে তো অবস্থা কাহিল। ঘেমে একাকার। যেন নাভিশ্বাস উঠছে রাজধানীবাসীর। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশেই বৃষ্টির দেখা নেই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। এ অবস্থা কাটতে আরও দু’একদিন লাগবে।

Advertisement

ঢাকার জিয়া কলোনিতে চায়ের দোকানি আল-আমীন। বৃহস্পতিবার চা সিগারেট রুটি বিক্রি করছিলেন। লক্ষ্য করে দেখা গেল, তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। তিনি বলছিলেন, আর কইয়েন না, মন চাচ্ছে মালমূল ফেলে ফ্রিজে ঢুকে বসে থাকি।

একটি স্বনামধন্য গ্রুপের মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত আলী আযম। গরমের এমন অবস্থা বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মারা যাচ্ছি। গরম কারে কয়, মরণদশা। ভাবছি, এখন আর কাজ করবো না। বিকেল গড়ালে গরম কমলে আবার কাজ করবো। কেবল আযমই নন, ঘর বা কর্মস্থলের বাইরে থাকা মানুষ তীব্র দাবদাহে যেন মরণদশায়।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় এটাই চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবারই বছরের উষ্ণতম দিন পেয়েছে ঢাকা।

Advertisement

বুধবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকার তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা পাঁচ দশকের সর্বোচ্চ।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাটে, সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডের কোথাও কোথাও এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে।

এই দাবদাহের বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ রয়েছে। লঘুচাপ হওয়ার কারণে সব মেঘ বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে, আমাদের এখনকার (ঢাকার) মেঘের ফোকাসটা ওই জায়গায়। সেজন্য এখানে বৃষ্টিটা কম। লঘুচাপ পশ্চিমবঙ্গের দিকে উঠে যাবে দু-তিনদিন পরই।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘লঘুচাপ উঠে গেলে আগামী দুদিন পর বৃষ্টি আবার শুরু হতে পারে। এখন এপ্রিল, মে মাস নয়, তারপরও গরম লাগছে, কারণ বর্ষাকাল। এ সময় বাতাসে জলীয়বাস্প থাকে। বৃষ্টি না হয়ে যদি রোদ থাকে, তবে গরমের অনুভূতিটা বেশি হয়।’

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। মধ্য প্রদেশ ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি মৌসুমী বায়ুর অক্ষের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং তা উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজমান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আরএম/আরএমএম/জেডএ/জেআইএম