হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্য কাবা শরিফ তাওয়াফ ফরজ ইবাদত। ফরজ তাওয়াফ ছাড়াও কাবা শরিফ তাওয়াফ করা অনেক বড় সাওয়াবের কাজ। হাদিসে পাকে এসেছে-
Advertisement
‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন বাইতুল্লাহ শরিফের ওপর ১২০টি রহমত নাজিল করেন। এ ১২০টি রহমতের মধ্যে শুধু তাওয়াফকারীদের জন্যই ৬০টি রহমত নির্ধারিত।’
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। তা হাদিসে পাকে সুস্পষ্ট ভাষায় ওঠে এসেছে-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা আগমন করলেন, তিনি মসজিদে হারামে প্রবেশ করলেন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদে ইসতেলাম (স্পর্শ) করলেন (চুম্বন করলেন)।
Advertisement
পরে ডান দিকে অগ্রসর হলেন- এতে তিনি (প্রথম) ৩ চক্কর রমল (হাত দুলিয়ে জোরে চলা) করলেন; আর ৪ চক্কর স্বাভাবিকভাবে হাটলেন।’ (তিরমিজি)
তাওয়াফের শুরুতে দোয়াহাজরে আসওয়াদ চুম্বন, ইসতেলাম (স্পর্শ) বা ইশারা করার মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করা। আর এ দোয়া পড়া-بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَر - اَللَّهُمَّ اِيْمَنًا بِكَ و بصديقًا بِكِتَابِكَ وَرَفَعًا بِعَهْدِكَ وَ اِتِّبَعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَউচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার; আল্লাহুম্মা ইমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বিকাতাবিকা ওয়া রাফাআন বিআহদিকা ওয়া ইত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা।’
ফরজ তাওয়াফযাদের জন্য কাবা শরিফ তাওয়াফ করা ফরজ। তাদের জন্য দুটি কাজ করা জরুরি; আর তাহলো- ইজতিবা ও রমল।
আরও পড়ুন > কাবা শরিফের তাওয়াফ বাম দিকে করার রহস্য কী?
Advertisement
ইজতিবাইহরামের গায়ের চাদরকে ডান বগলের নিচে দিয়ে চাদরের উভয় মাথাকে বাম কাঁধের ওপর দিয়ে এক মাথা সামনে আর অন্য মাথা পেছনে ফেলানো। এটা করা সুন্নাত। তাওয়াফের সময় এভাবে বীর-বাহাদুরি সুলভ ভঙ্গিতে গায়েল চাদর পরিধান করাই হলো ইজতিবা।
রমলফরজ তাওয়াফের প্রথম ৩ চক্করে রমল করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তাহলো তাওয়াফের সময় মুজাহিদের মতো বীরদর্পে দুই হাত, শরীর ও কাঁধ দুলিয়ে দ্রুত গতিতে চলা।
তাওয়াফে রমল করার রহস্যমুসলমানদের হিজরতের পর মক্কার মুশরিকরা বলাবলি করতে লাগলো যে, ইয়াসরিবে (মদিনা) হিজরতকারী মুসলমানরা আবহাওয়া ও অন্যান্য কারণে দুর্বল ও রুগ্ন হয়ে গেছে।
মুশরিকদের এ অহেতুক মিথ্যা অপবাদের প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে তাওয়াফের সময় প্রথম ৩ চক্করে রমল তথা বীরদর্পে চলার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে আজও সে বিধান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।
নফল তাওয়াফস্বাভাবিক সময়ের তাওয়াফে ইজতিবা ও রমল করার কোনো প্রয়োজন নেই। সাধারণ পোশাকে স্বাভাবিকভাবে হাটার মাধ্যমে তাওয়াফ করা। এ তাওয়াফকারীদের জন্যও ৬০টি রহমত সুনির্ধারিত।
তাওয়াফকারীদের জন্য ইসতেলামযারা কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন তা ফরজ হোক আর নফল হোক সব তাওয়াফেই ইসতেলাম বা স্পর্শের মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করা। সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ তথা চুমু খেয়ে তাওয়াফ শুরু করা। সম্ভব না হলে দূর থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে দু’হাত কাধ বরাবর ওঠিয়ে ইশারা বা ইঙ্গিত করে তাওয়াফ শুরু করা। আর তা ইসতেলাম হিসেবেই সাব্যস্ত হবে।
রোকনে ইয়ামেনি ইসেতলামতাওয়াফের সময় সম্ভব হলে রোকনে ইয়ামেনিও স্পর্শ করা। সম্ভব না হলে দূর থেকে দু’হাতে ইশারা করা। অতঃপর রোকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত প্রান্তে এ দোয়া পড়া-رَبَّنَا اَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِى الْاَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِউচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্ নার।’
এ দোয়া পড়তে পড়তে রোকনে হাজরে আসওয়াদ-এ আসার মাধ্যমে চক্কর পূর্ণ হবে। আর এভাবে সাতবার কাবা শরিফকে চক্কর দেয়ার মাধ্যমে এক তাওয়াফ আদায় হবে।
আরও পড়ুন > কাবা শরিফ তাওয়াফে ‘ইজতিবা ও রমল’ করার রহস্য
মনে রাখতে হবেঅতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে ইসতেলাম (স্পর্শ) বা চুমু খেতে না যাওয়াই উত্তম। দূর থেকে ইশারা করে তাওয়াফ সম্পন্ন করা।
নারীদের ক্ষেত্রে ইজতিবা, রমল ও ইসতেলামনারীদের জন্য ইজতিবা ও রমল নেই। তাওয়াফে যে ভিড় হয়; তাতে হাজরে আসওয়াদ বা রোকনে ইয়ামেনিও স্পর্শ বা চুম্বন নিরাপদ নয়। তাই দূর থেকে ইশারা করে তাওয়াফ সম্পন্ন করা অতি উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফে যথাযথ সম্মান ও তাকওয়া অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম