দেশজুড়ে

নৌকার জোয়ারে ভাসছে ঘিওরের নৌকার হাট

বর্ষায় গ্রাম অঞ্চলের প্রধান যান নৌকা। তাই মৌসুম শুরুই বেড়েছে নৌকার কদর। যে কারণে মানিকগঞ্জের ঘিওরের ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট জমে ওঠেছে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার এই হাটে শত শত নৌকার সমাহার ঘটে। ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হাটে এবার বেচা-বিক্রিও বেশ ভালো। কাঠের তৈরি এই নৌকাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ডুঙ্গা বা ডিঙ্গি। মানিকগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা আসে শত বছরের পুরনো এই হাটে।

Advertisement

বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, ঘিওর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ ও সরকারি কলেজ মাঠের বিশাল এলাকা জুড়ে বসেছে নৌকার হাট। সারি সারি করে রাখা হয়েছে নৌকাগুলো। আর ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত হাটটি।

মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলা পদ্মা-যমুনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি ও কালীগঙ্গা নদীবেষ্টিত। রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল ও ডেবা-নালা। বর্ষায় এর বেশির ভাগই পানিতে ডুবে থাকে। এ ছাড়া নিচু এলাকাগুলো আগেই প্লাবিত হয়। আর তখনই চলাচলের প্রধান বাহন হয়ে ওঠে নৌকা। দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থে নদী ও খালের তীরবর্তী প্রতিটি পরিবারেই নিজস্ব নৌকা থাকে। যুগ যুগ ধরে নৌকা এসব অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে আসছে।

নৌকা ব্যবসায়ীরা জানায়, ঘিওর হাটে বেশির ভাগ নৌকা আসে সাভার, টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও মানিকগঞ্জের ঝিটকা এলাকা থেকে। মেহগনি,কড়েই,আম চাম্বল,রেইন্ট্রি গাছে কাঠ দিয়ে নৌকাগুলো তৈরি করা হয়। আকার ও মানভেদে প্রতিটি নৌকা বিক্রি হয় ২ থেকে ৭ হাজার টাকায়। টাঙ্গাইলের নাগরপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালী এবং রাজবাড়ি, ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা আসেন এই হাটে।

Advertisement

দৌলতপুরের চকমিরপুর এলাকা থেকে আসা ক্রেতা আব্দুর রহিম জানান, তার বাড়ির চারপাশেই এখন পানি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়াসহ নিজেদের চলাচলে খুবই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি নৌকা কিনলেন তিনি।

ঘিওরের সিংজুড়ি গ্রামের লুৎফর মিয়া জানান, বর্ষায় কোনো কাজ কর্ম থাকে না। তাই মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেন। এজন্যই নৌকা কিনতে এসেছেন তিনি। তবে গত বারের চেয়ে এবার নৌকার দাম তুলনামূলক কম।

ধামরাই থেকে চাম্বল কাঠের ৫০টি নৌকা নিয়ে হাটে বিক্রি করতে এসেছেন বেপারী জহিরুল ইসলাম। দুপুর ১২টা পযন্ত নৌকা বিক্রি হয়েছে ৫টি। প্রতিটি নৌকায় তার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ হয়েছে।

ঘিওর নৌকা হাটের ইজারাদার আব্দুল মতিন মুছা জানান, প্রতি বুধবার ৩০০ থেকে ৪০০ নৌকা ওঠে এই হাটে। শুধু মানিকগঞ্জ নয় আশপাশের জেলাগুলোতেও এতবড় নৌকার হাট নেই। হাটের চারপাশেই নদী ও খাল থাকায় যাতায়াতেও সুবিধা রয়েছে। প্রতিটি নৌকায় ৫ শতাংশ হারে টোল আদায় করা হয়।

Advertisement

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা খন্দকার জানান,ঘিওর নৌকার হাটের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি নিজেও একদিন নৌকার হাট ঘুরে দেখেছেন। বিগত বছরের তুলনায় এবার নৌকার হাট অনেক জমেছে। শত শত নৌকার সমাহার সত্যিই খুবই দৃষ্টিনন্দন।

বি এম খোরশেদ/আরএ/আরআইপি