ভারতের উত্তরপ্রদেশে ইসলাম ধর্মের তিন তালাক ও 'নিকা হালালা' বা হিল্লাহ্ বিয়ে প্রথার শিকার দু'জন মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতারা ফতোয়া জারি করার পর তারা রুখে দাঁড়িয়ে বলেছেন ইসলাম থেকে তাদের বের করার অধিকার কারও নেই।
Advertisement
বেরিলির গৃহবধূ শাহবিনাকে তার স্বামী তিন তালাক দেয়ার পর হিল্লাহ্ বিয়ের মাধ্যমে তার শ্বশুরের সঙ্গে এক রাতের জন্য শুতে বাধ্য করা হয়েছিল- যাতে তিনি নিজের স্বামীকে আবার বিয়ে করতে পারেন।
কিন্তু সেই স্বামী আবার তাকে তালাক দিলে যখন তাকে বলা হয়, দেবরের সঙ্গে রাত কাটালে তবেই তিনি আবার স্বামীকে বিয়ে করতে পারবেন, তখন শাহবিনা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
দেবরের সঙ্গে শুতে না-চাওয়ায় তাকে বাড়ি থেকেও বের করে দেয়া হয়। শাহবিনা এরপর যোগাযোগ করেন লখনৌতে আলা হজরত হেল্পিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা নিদা খানের সঙ্গে- যার জীবনের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম।
Advertisement
আরও পড়ুন : গুহায় অলৌকিক আটকাবস্থার অভিজ্ঞতা শোনালো থাই কিশোররা
নিদা খানের বিয়ে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের একটি অভিজাত মুসলিম পরিবারের সন্তান উসমান রেজা খানের সঙ্গে। কিন্তু ২০১৬ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
নিদা খান তার স্বামীর দেয়া তিন তালাকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে যান আর সেই মামলাও জেতেন। আদালতে তিনি বলেছিলেন, তার স্বামী এত শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন যে তার গর্ভপাতও হয়ে গিয়েছিল।
বিবাহ-বিচ্ছিন্ন নিদা খান অবশ্য তার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের এনজিও তৈরি করে তিনি তিন তালাক ও নিকা হালালের ভিক্টিমদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আর বেরিলির শাহবিনার পাশে দাঁড়াতেও তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন।
Advertisement
কিন্তু এরপরই সোমবার বেরিলির শহর ইমাম মুফতি খুরশিদ আলম নিদা খান ও শাহবিনা- দুজনের বিরুদ্ধেই ফতোয়া জারি করে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ইসলামকে অপমান করার জন্য তাদের ধর্ম থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : ভারতে রুশ তরুণীকে গণধর্ষণ
'নিদা খান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কোনো ওষুধ দেওয়া যাবে না। সে মারা গেলে তার জন্য কেউ নামাজ পড়বে না, কেউ তার জানাজায় যেতে পারবে না- বলা হয়েছে ফতোয়ায়। এমনকী, কবরস্থানেও তাকে দাফন করা যাবে না। যারা তাকে সমর্থন করবে বা তার পাশে দাঁড়াবে, তাদেরও ঠিক এই একই শাস্তি হবে।
দারুল উলুম দেওবন্দের স্বীকৃত দারুল ইফতা ওই ফতোয়া জারি করার পর থেকেই শাহবিনা ও নিদা খানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তারা একটি এফআইআর দায়ের করেছেন।
আরও পড়ুন : ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত জাতিতে পরিণত হচ্ছেন রোহিঙ্গারা’
বেরিলির পুলিশ প্রধান অভিনন্দন সিং জানিয়েছেন, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তারা তদন্ত শুরু করেছেন। নিদা খান নিজে অবশ্য দাবি করেছেন এই সব হুমকি-ধমকিকে তিনি মোটেই ভয় পাচ্ছেন না।
'যারা এসব ফতোয়া দিচ্ছে তারা পাকিস্তানে গিয়ে ওসব করুক, এ দেশে ওসবের ঠাঁই হবে না। আর আমাদের ইসলাম থেকে বের করে দেয়ার অধিকারও কারও নেই- বলেন তিনি।
তিন তালাকের বিরুদ্ধে একটি বিল এখন ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিবেচনাধীন আছে। নিকা হালালা বা হিল্লাহ্ বিয়ে প্রথার বিরুদ্ধে একটি আবেদনের শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে।
এদিকে, গত কয়েক মাসে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতেই অন্তত ৩৫টি তিন তালাক ও নিকা হালালার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বিবিসি বাংলা।
এসআইএস/জেআইএম