থাইল্যান্ডের থ্যাম লুয়াং গুহায় দুই সপ্তাহ ধরে আটকা থাকার পর উদ্ধার কিশোর ফুটবল দলের সদস্যরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের কাছে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে উইল্ড বোর ফুটবল দলের ১২ সদস্য ও কোচ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন।
Advertisement
ফুটবল দলের ১৪ বছর বয়সী সদস্য আদুল স্যাম-অন তাদের খুঁজে পাওয়ার মুহূর্তের কথা স্মরণ করে বলেন, এটা ছিল 'অলৌকিক মুহূর্ত'। ব্রিটিশ ডুবুরিরা যখন তাদের গুহার অন্ধকার উঁচু এক ঢিবিতে খুঁজে পান তখন প্রথমে এই ঘটনাকে বিশ্বাস করতে পারেননি কিশোররা।
কিশোররা বলেন, গুহায় আটক থাকাকালীন সময় পার করার জন্য তারা হপ-স্কচ খেলার চেষ্টা করেন। ১০ দিনের আটকাবস্থার সময় গুহা থেকে বের হয়ে আসার জন্য তারা পথ খোঁজার চেষ্টাও করেন।
আরও পড়ুন : হাসপাতাল ছাড়ল থাই কিশোররা
Advertisement
উদ্ধার অভিযানের সময় থাই নেভি সিলের এক সদস্য অক্সিজেন সঙ্কটে মারা যান। তার প্রতি ও উদ্ধারকারীদের সম্মান জানাতে এই কিশোরদের কয়েকজন ভবিষ্যতে নেভি সিলের সদস্য হওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
কোচ এবং দলের সদস্যদের পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন স্যাম। ব্রিটিশ ডুবুরিরা যখন তাদের কাছে পৌঁছায় সেই সময়ের কথা স্মরণ করে স্যাম বলেন, প্রথমে আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, এটি সত্যি। আমরা ভয়ে ছিলাম; তারা দ্রুত আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। এজন্য অামি তাদের 'হ্যালো' বলেছিলাম।
স্যাম বলেন, আমি প্রথমে তাদের কাছে থেকে হ্যালো শব্দটি শুনতে পেয়েছিলাম; কিন্তু তাদের দেখতে পাইনি। আমরা তাদের এগিয়ে আসার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম; কারণ তারা পানিতে সাঁতার কেটে আসছিল। তারা কিছু একটা বলছিল।
'আমি মনে করেছিলাম তারা থাই কর্মকর্তা কিন্তু যখন তারা পানি থেকে উঠে আসে তখন বুঝতে পারি যে, তারা ইংরেজ। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী বলবো। সে জন্য হ্যালো বলেছিলাম।'
Advertisement
আরও পড়ুন : অসম্ভব এক মিশনের সফলতার গল্প
'এটা ছিল অলৌকিক, আমি অবাক হয়েছিলাম। আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক করছিল, কখন আমরা বাইরে যেতে পারবো। এরমাঝে তিনি জানতে চান, আমরা কেমন আছি। আমি বলেছিলাম, আমরা ঠিক আছি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি কী তোমাকে সাহায্য করতে পারি? তিনি বলেছিলেন, না, ওপরের দিকে যাও।'
'তারা জানতে চেয়েছিল, তোমরা কতজন? আমি বলেছিলাম, ১৩ জন। তারা বলেছিলেন, দুর্দান্ত।'
গণমাধ্যমে গুহায় আটকা থাই কিশোররা সাঁতার জানেন বলে জানানো হলেও তাদের কোটচ একাপ্পল চ্যান্তাওং বলেছেন, ছেলেরা সাঁতার কাটতে জানে। তারা আটকা পরার আগে কখনোই গুহায় যায়নি। কিন্তু অতীতে অনলাইনে গুহায় যাওয়ার ছবি পোস্ট করেছিলেন এই কোচ।
আরও পড়ুন : থাই কিশোরদের শ্বাসরুদ্ধকর গুহাবাস নিয়ে হলিউড চলচ্চিত্র!
তিনি বলেন, পানি বাড়ায় প্রথমে তারা বুঝতে পারেন যে আটকা পড়তে যাচ্ছেন। প্রথম দিকে কেউ ভয় পায়নি। কারণ তাদের ধারণা ছিল, দিনের শেষে পানি কমে যাবে এবং উদ্ধারকারীরা চলে আসবেন। কিন্তু তিনি যখন বুঝতে পারলেন পানি কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তখন যে জায়গায় আটকা ছিল তার পেছনের দিকে পথ খোঁজার জন্য কিশোরদের নির্দেশ দেন তিনি। তার ধারণা ছিল, পথ খুঁজে পেলে দঁড়ি বেয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়া যাবে।
শরীরে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গুহায় আটকাবস্থার সময় উইল্ড বোর ফুটবল দলের এই কোচ কিশোরদের ধ্যানের অনুশীলন করিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
গত ২৩ জুন থেকে গুহায় উইল্ড বোর ফুটবল দলের ১২ কিশোর সদস্য ও তাদের কোচ আটকা ছিলেন। ২ জুলাই ৯ দিনের এক অভিযানের পর দুই ব্রিটিশ ডুবুরি গুহার ভেতরে কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের খুঁজে বের করেন। দীর্ঘ প্রায় ৪ কিলোমিটার সংকীর্ণ ও উঁচু-নিচু জলমগ্ন পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরদের উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শুরু হয়।
আরও পড়ুন : থাই নেভি সিলের প্রশ্ন : এটা কী অলৌকিক ঘটনা?
প্রথম দিকে থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, গুহায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ও বর্ষা মৌসুমে বর্ষণের কারণে তাদের এখনই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু ৮ জুলাই নাটকীয়ভাবে বন্যার পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় এবং বর্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার মিশনের প্রধান ও চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর ন্যারংস্যাক ওসোত্তানাকর্ন জানান, কিশোরদের উদ্ধারে এখনই উপযুক্ত সময়। ওই দিন প্রথম দফায় চারজন ও পরদিন দ্বিতীয় দফায় চারজনকে উদ্ধার করা হয়। কোচসহ বাকি চারজনকে ১০ জুলাই বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা।
চিয়াং রাই প্রদেশের গুহায় আটকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারে ১৩ বিদেশি ডুবুরি ও থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর অভিজাত শাখা থাই নেভি সিলের পাঁচ সদস্য কাজ করেন। এছাড়া গুহার ভেতরে ও প্রবেশ পথে আরো অন্তত ৯০ জন ডুবুরি উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে অক্সিজেনের অভাবে থাই নেভি সিলের সাবেক এক সদস্য গুহার ভেতরে মারা যান।
সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, ডেইলি মেইল।
এসআইএস/এমএস