জাতীয়

স্বর্ণে গোলমাল : গাফিলতি পেলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা

অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ নিয়ে অনিয়মের খবর যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেটা পুরোপুরি সত্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের মধ্যে যোগাযোগ ঘাটতিতেই এ সংকট।’

Advertisement

‘তবে আমরা বিষয়টি ছোট করে দেখছি না। পর্যালোচনা করে কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী। বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, এনবিআরের সদস্য কালিপদ হালদার, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম, কাস্টমস কার্যক্রম মূল্যায়ন ও অডিট কমিশনার ড. মইনুল খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া স্বর্ণ জমা রাখার সময় ৪০ শতাংশই ছিল। কিন্তু ইংরেজি-বাংলার হেরফেরে সেটা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়েছিল। ৮০ এবং ৪০-এ ক্লারিক্যাল মিস্টেক (করণিক ভুল) হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ছয় স্তরের নিরাপত্তা আছে, কোনো স্বর্ণ বাইরে যায়নি। জনগণের সম্পদ রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। তাই টোটাল নিরাপত্তা সিস্টেমটা পর্যালোচনা করে ঢেলে সাজানো হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।’

মান্নান বলেন, ‘সংবাদপত্র পড়ে আমি বিষয়টি জেনেছি। এর আগে জানতাম না। পত্রপত্রিকায় যেভাবে এসেছে তা আমার কাছে ভয়াবহ মনে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের প্রধান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রেস কনফারেন্স করেছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত যে সন্দেহ ছিল, ভিতি ছিল তা কমে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘কাজ করলে কিছু ধারণাগত তফাৎ হতে পারে। সব স্বর্ণ ঠিক আছে। ঘরেই আছে। ৪০ ক্যারেট আর ৮০ ক্যারেট নিয়ে ভুল হতেই পারে। আগে সোনা মাপা হতো মান্ধাতার আমলের নিক্তি দিয়ে। এখন আধুনিক পরিমাপক দিয়ে মাপা হয়। তাতে দশমিক ০০০০১ শতাংশ কম-বেশি হয়। অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরলে বিষয়টির সম্ভাব্য সব উপায় খতিয়ে দেখা হবে।’

Advertisement

গত দুই বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এনবিআরের চিঠি চালাচালি হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমলাতান্ত্রিক গাফিলতি আছে, লিখিত চিঠির জবাব এসেছে দেড় মাস পর। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর, দুই প্রতিষ্ঠানেরই গাফিলতি রয়েছ।’

তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিটি হবে সেট এখনই বলছি না। তবে তদন্ত বা পর্যালোচনা কমিটি যেকোনো ফরমেটেই হোক একটা কমিটি হবে।’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিদেশে অবস্থান করায় প্রতিমন্ত্রী বুধবার ‘জরুরি’ এ বৈঠক ডাকেন।

গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) একটি দৈনিকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিনভর আলোচনা চলে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ পরীক্ষা করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা তিন কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের চাকতি ও আংটির জায়গায় এখন আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। আর ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।’

ওই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন এবং ভল্টের দায়িত্বে থাকা কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণে কোনো ধরনের হেরফের হয়নি; স্বর্ণকারের ভুলে, ভাষার গণ্ডগোলে ৪০ হয়ে গেছে- এটাই।’

আওলাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি বলতে যা আছে, নথিভুক্তের সময় ইংরেজি-বাংলার ভুল। এর বাইরে অন্য ত্রুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই।’

এমইউএইচ/এমবিআর/এমএআর/পিআর