খেলাধুলা

ফ্রান্স নয়, যেন বিশ্বকাপ জয় করেছে আফ্রিকা!

টুইটার দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া দুটি ছবি। একটিতে দেখা যাচ্ছে, পতপত করে উড়ছে ফ্রান্সের পতাকা। সেই পতাকার মধ্যেই আঁকা আফ্রিকা মহাদেশের মানচিত্র। উপরে ক্যাপশন লেখা, ‘আই টোল্ড ইউ গাইজ, ফ্রান্স ইজ অ্যা কান্ট্রি ইন আফ্রিকা।’

Advertisement

অন্যছবিতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকশত আফ্রিকানের লাইন এবং কিছু একটা অর্জন করার জন্য সেই লাইনের মধ্যেই নিরন্তর চেষ্টা সেই আফ্রিকান মানুষগুলোর। ক্যাপশনে লেখা, ‘আগামী বিশ্বকাপের আগে ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল দলে ঠাঁই করে নেয়ার জন্য এভাবেই লাইন ধরেছে আফ্রিকান ফুটবলাররা।’

উপরের দুটি ছবি এবং ক্যাপশনের সঙ্গে এবার মিলিয়ে নিন ভেনেজুয়েলা প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর একটি কথা। তিনি বলেছেন, ‘ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আফ্রিকাই।’

আরেকটি তথ্য উপস্থাপন করলে উপরের তিনটি কথার সঙ্গেই যোগসূত্র স্থাপন খুবই সোজা হয়ে যাবে। রাশিয়া থেকে ফ্রান্সের যে দলটি বিশ্বকাপ জিতেছে, সেই দলের ২৩ ফুটবলারের মধ্যে ১৫ জনই আফ্রিকান। তবে আল জাজিরার এক ভিডিও ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে, ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জনই আফ্রিকার। আফ্রিকান অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দিয়ে তাদেরকে লালন করে বিশ্বজয়ের স্বীকৃতি অর্জন করে নিলো ফ্রান্স।

Advertisement

সুতরাং, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলাতেই হয়, ফ্রান্স নয় যেন বিশ্বকাপ জয় করেছে আফ্রিকাই। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন পল পগবা, কাইলিয়ান এমবাপে, স্যামুয়েল উমতিতি, জিবরিল সিদিব, বেনজামিন মেন্ডি, স্টিভেন এনজোনজি, এনগোলা কান্তে, ব্লাইজ মাতুইদি, কিম্বেপ্পে, নাবিল ফেকির, ওসমান ডেম্বেলেরা।

অধিকাংশের মত হচ্ছে মোট ১৫ জন আফ্রিকান অভিবাসী এবারের ফ্রান্স বিশ্বকাপ জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। তারা হচ্ছেন, ‘স্যামুয়েল ইমতিতি, জন্ম ক্যামেরুনে। স্টিভ মান্দান্দা এসেছেন কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে। পল পগবা প্রতিনিধি ছিলেন গানার। এনগোলা কান্তে এসেছেন মালি থেকে। ব্লাইজ মাতুইদি এসেছেন অ্যাঙ্গোলা থেকে। কাইলিয়াম এমবাপের মা আলজেরিয়ান এবং বাবা ক্যামেরুনের। প্রেস্নেল কিমপেম্বে এবং স্টিভেন এনাজোনজির বাবা কঙ্গোলিজ। কোরেন্তিন তোলিসোর বাবাও এসেছেন টোগো থেকে।

জিবরিল সিদিব মালি বংশোদ্ভূত। নাবিল ফেকিরের মা-বাবা দু’জনই আলেজেরিয়ান। বেঞ্জামিন মেন্দির মা-বাবা দু’জনই সেনেগালিজ। থমাস লেমেরে নাইজেরিয়ান এবং গুয়াডেলোপিয়ান বংশোদ্ভুত। আদিল র‌্যামি মরক্কান বংশোদ্ভূত। ওসমান ডেম্বেলের মা মৌরিতানিয়া এবং বাবা সেনেগালের।

বিশ্বকাপ জয়ের পর ফ্রান্স ফুটবল দলের কোচ দিদিয়ের দেশম স্বীকার করলেন আফ্রিকান অভিবাসীদের অবদানের কথা। তিনি সরাসরি জানিয়ে দিলেন, ‘এটা সব সময়ের সত্য কথা যে, ফ্রান্স দলটি গঠন করা হয় আফ্রিকান এবং অন্য দেশ থেকে অভিবাসী হয়ে আসা ফুটবলারদের নিয়ে। এটা শুধু ফুটবলেই নয়, সব খেলাতেই। তবে আমরা এখন সবাই ফরাসি। এখানে অন্য কোনো ভেদাভেদ নেই।’

Advertisement

শেষে নিকোলাস মাদুরোর কথাই বলতে হয়, ‘ইউরোপের উচিৎ অভিবাসী হয়ে আসা মানুষদের সঙ্গে আরও মানবিক আচরণ করা। ফ্রান্সে আফ্রিকান অভিবাসীরা দেখিয়ে দিয়েছে, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে, তারাও বিশ্বজয় করতে পারে।’

আইএইচএস/বিএ