পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সংগঠন জমিয়তে উলামা হিন্দ (এআইইউডিএফ) নেতা মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে দূরত্ব কমে আসছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। সম্প্রতি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এর ওই নেতার মধ্যে রাজ্য সচিবালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর অনেকেই এ মন্তব্য করছেন।বৈঠকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলা হলেও রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে এআইইউডিএফ-এর মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।ওই বৈঠকের পর সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাপক প্রশংসা করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ প্রচেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে। রাজ্যে সিপিএম পরিচালিত বামপন্থী সরকারের সময় সংখ্যালঘু মুসলিমরা নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে সেই সময় প্রতিবাদ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধেও গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ফলে সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন বামফ্রন্টের দিক থেকে সরে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে জমা পড়ে। যদিও ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনের সময় মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় থেকেই আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে থেকেছি। সিপিএমের অপশাসন দূর করতে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আমরা তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়েছিলাম। কিন্তু তার সঠিক প্রতিদান দেয়া হয়নি। ২০১১ সালে রাজ্যের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসে। এসময় নির্বাচনে বামফ্রন্ট পরাজিত হলে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর তৃণমূল শাসনের চার বছর পার হলেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা বা রাজনৈতিক সমঝোতার কথা হয়নি। এই প্রথম মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসলেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃণমূল এবং এআইইউডিএফ-এর মধ্যে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় রাজ্যের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ হতে চলেছে। এআইইউডিএফ নেতা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী রাজ্য সরকারের প্রশংসা করলেও রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অন্যান্য সংগঠনগুলো সরকারের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয়। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ মঞ্চ মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদ- এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গণআন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২২ জুলাই এক সমাবেশে সংখ্যালঘুদের অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। মমতা সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে বিভ্ন্নি দাবি করলেও ফুরফুরা শরীফের পীর ইব্রাহিম সিদ্দিকি সম্প্রতি বলেছেন, মমতা ফুরফুরায় আইটিআই থেকে রেল প্রকল্পর নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। এদিকে, তৃণমূলের কোণঠাসা হয়ে থাকা সংসদ সদস্য মুকুল রায়ও সংখ্যালঘু উন্নয়নে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন। এসআইএস/পিআর
Advertisement