দেশজুড়ে

ব্যক্তি ইমেজে জয় দেখছেন লিটন

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তার রয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্য ও ব্যক্তি ইমেজ। আর এতেই আগামী ৩০ জুলাইয়ের সিটি নির্বাচনে জয় দেখছে আওয়ামী লীগ। সাবেক এই মেয়র নৌকা প্রতীকে লড়ছেন এবার।

Advertisement

তবে কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ‘বিএনপি জুজু’র ভয়। নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আসন্ন এ নির্বাচনে লিটনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। বুলবুলের কাছেই ২০১৩ সালের নির্বাচনে হেরে যান লিটন। এর আগে ২০০৮ সালে বুলবুলকে হারিয়ে মেয়র হন তিনি। এরপর ব্যাপক উন্নয়ন করে নগরীর চেহারা বদলে দেন।

কিন্তু ২০১৩ সালে বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হয়ে খুব কম সময়ই চেয়ারে বসার সুযোগ পেয়েছেন। মামলা, গ্রেফতার, কারাবরণ ছাড়াও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রায় আড়াই বছর নগর ভবনের বাইরেই কাটে তার। এটিই প্রধান ইস্যু ধরে নিয়ে একাট্টা বিএনপি মাঠে নেমেছেন দলীয় প্রার্থী বুলবুলকে জেতাতে। উন্নয়ন ধারাবাহিকতা রক্ষায় আবারো সুযোগ চাইছেন বুলবুল।

এতকিছুর পরও নৌকার অবস্থান চাঙ্গা দেখছে আওয়ামী লীগ। এখন সরকারবিরোধী মনোভাব মাথাচাঁড়া না দিলে লিটনেরই জয় দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

Advertisement

তবে ভাবনা বাড়িয়েছে দলীয় প্রতীক নৌকা। অতীত নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ এলাকায় ভোটের ফল গেছে অনেকটাই নৌকার প্রতিকূলে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে লিটনের বাবা এএইচএম কামারুজ্জামান রাজশাহী-১ ও রাজশাহী-২ আসনে বিজয়ী হন। এরপর রাজশাহী-২ আসন ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে হেরে যায় নৌকা।

১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন হেরে যান লিটন। তবে ২০০৮ সালের রাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন তিনি। কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ বের করেছে আওয়ামী লীগ। নেতারা বলছেন, সেবার পরাজয়ের প্রধান কারণ ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে লিটনের দূরত্ব। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এ দূরত্ব বাড়তে থাকে। তবে নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিষয়টি টের পান লিটন। দীর্ঘ সময় পর ফিরে পান তার আগের অবস্থান।

এদিকে, লিটনের বাবা এএইচএম কামারুজ্জামান জাতীয় চার নেতার অন্যতম। কামারুজ্জামান ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) ও রাজশাহী-২ (পবা-বোয়ালিয়া) আসনে বিজয়ী হন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এ সহচর তৎকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। ৭৫’ এর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী কামারুজ্জামানসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে ঘাতকরা।

লিটনের দাদা আবদুল হামিদ মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য (এমএলএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আব্দুল হামিদের বাবা হাজী লাল মোহাম্মাদ যুক্ত ছিলেন কংগ্রেসের রাজনীতিতে। তিনি রাজশাহী থেকে পর পর দুবার লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের (এমএলসি) সদস্যও নির্বাচিত হন। রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ও বরেন্দ্র একাডেমির একমাত্র মুসলিম সদস্য ছিলেন হাজি লাল মোহাম্মদ।

Advertisement

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন লিটন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য লিটন বর্তমানে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদেও রয়েছেন। এখন এ অঞ্চলের শীর্ষ নেতা হয়ে উঠেছেন লিটন। জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো নিয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেন তিনি। তাছাড়া দলীয় প্রার্থী হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তেও হয়নি। আর এসব কারণেই আসন্ন এ সিটি নির্বাচনে লিটন এগিয়ে রয়েছেন সবদিক দিয়েই।

এছাড়া এবার ভোটের মাঠে বেশ সক্রিয়ভাবেই রয়েছে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি লিটন কন্যা অনিকা ফারিহা জামানের নেতৃত্বে চলছে প্রচার-প্রচারণা। দিনভর নগরীর পাড়া-মহল্লা, অলিগলি চোষে ফিরছেন ছাত্রলীগের ৩৭টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট ছাড়াও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ ও মহিলালীগসহ অন্যান্য পেশাজীবীরাও নেমেছেন ভোটের প্রচারণায়। নানান কৌশলে চলছে প্রচার-প্রচারণা। একে ইতিবাচক ধরছেন নেতারা।

এ বিষয়ে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সদ্য সাবেক মেয়র (বুলবুল) কোনো উন্নয়নই করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, তিনি (লিটন) যা করে গিয়েছিলেন তাও ধরে রাখতে পারেননি। মেয়রের ব্যর্থতার কারণে এখন রাজশাহীর নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারা আর আগের ভুল করবেন না, দলমত-নির্বিশেষে নৌকায় ভোট দেবেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/পিআর