ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে ব্যাহত হচ্ছে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। ফলে সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
Advertisement
অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে নেই ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনও নষ্ট। এতে করে রোগীদের বাহিরে থেকে বেশি টাকায় রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়। রোগী আনা-নেয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিও ব্যবহার অনুপযোগী। এছাড়া ভর্তিকৃত রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন দায়িত্বরত নার্স-কর্মচারীরা। হাসপাতালের বর্হিবিভাগের কর্মরত চিকিৎসক সময়মত আসেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের কারণে অনেক রোগীই হাসপাতালের খাবার খেতে পারেন না।
গত ২৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগের চিকিৎসক রুমী আলমের হাসপাতালে ৮টার সময় আসার কথা থাকলেও তিনি আসেন দুপুর ১টার দিকে। দেরির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ঢাকা থাকি তাই আসতে দেরি হয়েছে। হাসপাতালের প্রধান সহকারী লাল মাহমুদ মিয়া। সবাই তাকে বড়বাবু বলে ডাকেন। তাকে খুশি না করলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন, বিল ভাউচার সময়মত পাওয়া যায় না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। বড়বাবুর হাতে হাসপাতালের কর্মচারীরা জিম্মি। এ দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী ফরহাদুল হকের বিরুদ্ধেও উঠেছে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। তিনি স্টোর রুমে থাকা এসি নিজের থাকার রুমে লাগিয়েছেন।
কালিহাতী উপজেলার পাছচারান গ্রামের বাদল মিয়ার স্ত্রী শান্তা বেগম হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, চারদিন পর আমার বিছানার নোংরা চাদর পরিবর্তন করা হয়েছে। খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও ডাল আর পানির তফাৎ বুঝা যায় না। হামিদপুরের শামছুন্নাহার নামে আরেক রোগী বলেন, ডাকলে ডাক্তার নার্সরা আসতে চায় না। বেশি ডাকলে নার্সরা রাগ হয়ে ধমক দেন।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ বলেন, হাসপাতালে অনিয়মের শেষ নেই এবং পরিবেশ নোংরা। ডাক্তারদের গাফিলতির কারণে সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। গত ২৫ জুন সকালে কালিহাতীতে ট্রাক দুর্ঘটনায় পাঁচজন মারা যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় কয়েকজনকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলেও সেখানে ডাক্তার পাওয়া যায়নি। পরে আহতদেরকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী ফরহাদুল হক বলেন, হাসপাতালে কোনো অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নেই। তবে কিছু জরুরি যন্ত্রাংশ মেরামত এবং ক্রয় করতে হবে। এতে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা হলেও ব্যাহতসহ রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে। এর জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরিফ হোসেন খান বলেন, হাপাতালের এসব অভিযোগ সম্পর্কে আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কিছুই জানান নাই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অনুমতি ছাড়া এসি মেশিন নিজের রুমে লাগাতে পারেন না। ডাক্তারদের সঠিক সময়ে না আসা এবং নার্সদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারের পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) ২০১৬ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কালিহাতীতে উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
Advertisement
আরিফ উর রহমান টগর/আরএ/পিআর