থানা মানেই টাকা। টাকা ছাড়া থানায় কোনো কাজ হয় না। এমন ধারণা জনসাধারণের। তবে জনসাধারণের সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই। এ থানায় সেবা নিতে আসা লোকজন টাকা ছাড়াই এখন সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অভিযোগ ও মামলা লেখা বা অন্তর্ভুক্ত করতে পারছেন।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নাটোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দুই বছর ৯ মাস কাজ করার পর নওগাঁ সদর মডেল থানায় ৩০ নম্বর ওসি হিসেবে গত ২৭/০৫/১৮ ইং তারিখে যোগদান করেন মো. আব্দুল হাই। যোগদানের পর থেকে থানায় প্রবেশের প্রধান ফটকের পাশে গোল ঘরে দুইজন অফিসারকে প্রতিদিন পালাক্রমে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের কাজ হচ্ছে সেবা নিতে আসা জনগণের অভিযোগ শোনা এবং প্রয়োজনে তা কাগজে লিখে নেয়া। প্রয়োজনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অভিযোগ ও মামলা লেখা বা অন্তর্ভুক্ত করা। এসবের বিনিময়ে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা নেয়া হয় না।
মো. আব্দুল হাই এই থানায় যোগদানের পর থেকেই এখানে দালালদের দৌরাত্ম কমে গেছে। ইতিমধ্যে তিনজন দালালের কাছ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা ভুক্তভোগীদের ফেরত দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় দালালদের সতর্ক করে থানায় তদবিরের জন্য না আসতে বলা হচ্ছে। সেবা প্রার্থীরা দালাল ছাড়াই নির্দ্বিধায় থানায় আসা-যাওয়া করতে পারছেন।
তবে ইতিপূর্বে থানায় একটি ডায়েরি লিখতে লেখককে ১শ’ টাকা দিতে হতো। আবার ওই জিডি অন্তর্ভুক্ত করতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে দিতে হতো কমপক্ষে ১শ’ টাকা। এছাড়া অভিযোগ বা এজাহার লিখতে ১শ-২শ টাকা এবং মামলা রেকর্ড করাতে কমপক্ষে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা গুনতে হতো ভুক্তভোগীদের। তবে দালাল ধরে এখন আর কাউকে থানায় আসতে হয়না। টাকা দিতে হয় না সেবা নিতে আসা জনসাধরণকে।
Advertisement
নওগাঁ সরকারি কলেজের ছাত্র সিয়াম উদ্দিন জানান, তার একটি মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে। থানায় জিডি করার জন্য এসেছিলেন। কীভাবে লিখবেন বুঝতে পারছিলেন না। পরে থানা পুলিশের সহযোগিতায় তিনি নিজেই কাগজে লিখলেন এবং সেটি জমা দিলেন। তবে এর বিনিময়ে কোনো টাকা গুনতে হয়নি তাকে। এতোদিন শুনেছিলেন থানায় জিডি করতে কমপক্ষে ৫০-১০০ টাকা খরচ হতো। এখন কোনো টাকাই লাগছে না।
নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের ব্যবসায়ী রহিদুল ইসলাম বলেন, থানায় অভিযোগ করার সময় সব ঘটনা খুলে বলি ওসি স্যারকে। এরপর থানায় ডিউটিরত একজনকে দিয়ে অভিযোগ লিখে নিয়ে আসতে বলেন। এরপর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে আসাামর স্ত্রী ও শ্যালককে থানায় নিয়ে আসে। তাদের নিকট থেকে আমার গচ্ছিত দুই লক্ষ টাকা উদ্ধার করে দেয়া হয়। ওসি স্যারকে কিছু সম্মানি দিতে চাইলেও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই বলেন, সেবা প্রার্থীদের সকল ধরনের সহযোগিতা করার জন্য থানার সকল অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই চেয়ারে বসে মানুষের সেবা করা সম্ভব। আরও আগে আসলে বেশি সেবা দিতে পারতাম।
নওগাঁর পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ডিআইজি স্যারের অনুমতি সাপেক্ষে পূর্ববতী রেকর্ড যাচাই করে ওসি আব্দুল হাইকে সদর থানায় পোস্টিং দেয়া হয়েছে। তার সেবাদানের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো রকম অভিযোগ পাওয়া যায়নি। জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ।
Advertisement
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে পুলিশর উপ-পরিদর্শ (এসআই) হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন আব্দুল হাই। নিজ কর্মদক্ষতা ও মেধায় ২০১০ সালে তিনি অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
আব্বাস আলী/আরএআর/জেআইএম