খেলাধুলা

দুর্বল ডিফেন্সই ডোবাল ক্রোয়েশিয়াকে

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে অবিশ্বাস্য জয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ফাইনালে ওঠার পর ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার লোভরান ডেজান খুব আত্মম্ভরিতার সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন, আমিই বিশ্বসেরা ডিফেন্ডার। লিভারপুলে খেলা এই ডিফেন্ডারের এমন হুঙ্কারে অবশ্য ফ্রান্স শিবিরে কতটা কাঁপণ ধরিয়েছিল তা জানা যায়নি। কারণ, এর প্রতিক্রিয়া দেখাননি কেউ।

Advertisement

তবে এটা নিশ্চিত, লোভরান ডেজানের এই কথায় ফ্রান্সের সুবিধাই হয়েছিল। কারণ, তারা আগে থেকেই সতর্ক হতে পেরেছিল এবং ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্স এবং খেলার স্টাইল নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছে। কোচ দিদিয়ের দেশম নিশ্চিত এসব নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। যার প্রমাণ পাওয়া গেলো মাঠেই।

১৯৯৮ সালে ফ্রান্স যখন প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে, তখন দলের অধিনায়ক ছিলেন দিদিয়ের দেশম। ২০ বছর পর তার কোচিংয়ে আবারও বিশ্বকাপ জিতলো ফরাসিরা। এর মধ্যে ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও জিনেদিন জিদানরা মাথা গরম করার কারণে শিরোপা জিততে পারলেন না। দিদিয়ের দেশমের মাথায়ও ছিল এসব বিষয়। অর্থ্যাৎ, বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে হলে নিশ্চিত মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।

দিদিয়ের দেশমের মূল দর্শনই ছিল মাথা ঠাণ্ডা রাখা। ম্যাচের শুরু থেকে একচেটিয়া খেলতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়াটদের ইচ্ছা করেই যেন নিজেদের বক্সে টেনে আনে ফরাসিরা। এরপর কাউন্টার অ্যাটাক থেকে উঠে এসে গোলের সুযোগ তৈরি করা। এটাই ছিল ফ্রান্সের মূল প্ল্যান। তাতে পুরোপুরি সফল ফ্রান্স। কারণ ম্যাচের ১৮ মিনিটেই গ্রিজম্যানকে ফাউল। বক্সের সামনে থেকে গ্রিজম্যানের নেয়া ফ্রি কিক নিজের মাথায় লাগিয়ে আত্মঘাতী গোল করেন মারিও মানজুকিচ। নিশ্চিত এটা ডিফেন্সের বড় ব্যর্থতা।

Advertisement

২৮ মিনিটে ইভান পেরিসিচের গোলটা নিঃসন্দেহে ছিল দারুণ। তবে, ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্স যে কতটা নড়বড়ে তা বোঝা গেলো ৩৬ মিনিটেই। এবার গ্রিজম্যানের কর্নার কিক থেকে ভেসে আসা বলটি হাত দিয়ে ঠেকান ইভান পেরিচিস। নিশ্চিত এটাও ডিফেন্সের ভূল কিংবা ব্যার্থতা। শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি এবং গ্রিজম্যানের শট থেকে গোল।

৫৯ মিনিটে পল পগবা যে গোলটি করেছিলেন সেটা তো পুরোপুরি ডিফেন্সের ভুলে। বক্সের মধ্যে ডিফেন্ডাররা দুবার বল ফিরিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পগবা যে শটটি নিয়েছিলেন, তখন ক্রোয়াট ডিফেন্ডাররা মোটেও সতর্ক ছিলেন না। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বেশ কয়েক মুহূর্ত সময় পেয়েছিলেন পগবা এবং তিনি দারুণ এক শট নেন। যেটা জড়িয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার জালে। ডিফেন্ডারদের কারণে বল চোখেও দেখেননি গোলরক্ষক সুবাসিচ।

৬৫ মিনিটে এমবাপে যে গোলটি করলেন, সেটাও নিশ্চিত ডিফেন্সের ভুলে। আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে গিয়ে পুরো ডিফেন্সই ফাঁকা করে ফেলে ক্রোয়েশিয়া। যে কারণে কাইলিয়ান এমবাপে পুরোপুরি সুযোগ পেয়ে যান গোল করার জন্য। ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডাররা কোনো সুযোগই পেলেন না গোলটি ঠেকানোর।

ক্রোয়েশিয়া নিশ্চিতভাবেই ডিফেন্সের ভুলে গোল হজম করে মোট ৪টি। যার দুটির একটি আত্মঘাতী এবং হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে পোনাল্টি থেকে। পিছিয়ে থেকে ডিফেন্স ফাঁকা করে ফেলার পর তার খেসারত দিলো বাকি দুই গোল হজম করে। শুধু তাই নয়, পল পগবার গোলটিতে পুরোপুরি অপরাধী ক্রোয়াট ডিফেন্ডাররা। ডেজান লোভরেনের হুঙ্কার যে আগেই বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল, সেটা বোঝাই যাচ্ছে।

Advertisement

আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচ পুরো বিশ্বকাপে যে দুর্দান্ত গোলকিপিং করেছেন, সেটা কোনোভাবেই ফাইনালে করতে পারলেন না। তার দুর্বল গোলকিপিংও ডুবিয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে।

আইএইচএস/