লক্ষ্মীপুরের কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে আবারও ধস দেখা দিয়েছে। ভেঙে গেছে বাঁধের দক্ষিণ অংশের প্রায় ২০০ মিটার। হুমকির মুখে রয়েছে বাঁধের বাকি অংশ। এ নিয়ে গত এক বছরে ছয়বার ধসের ঘটনা ঘটেছে।
Advertisement
বর্ষার শুরুতেই ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা বাঁধে ধস দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এই জনপদের লক্ষাধিক মানুষ। দ্রুত সংস্কার ও ভাঙন রোধে কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
রোববার ভোরে উপজেলার মাতাব্বর হাট এলাকায় নির্মাণাধীন তীর রক্ষা বাঁধে ধস নামে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দুই পাশে ভাঙনের খেলা চলছে। এর আগে গত বর্ষা মৌসুমেও ওই বাঁধে পাঁচবার ধস নামে। শুরুতে ঠিকাদারের হাত বদল ও পরবর্তীতে পাউবোর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিম্নমানের কাজ করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এক কিলোমিটার নির্মাণাধীন বাঁধের দুই পাশে অব্যাহতভাবে ভাঙছে। বাঁধের সীমানা ফেরিয়ে ভাঙন ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এতে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ধস ঠেকাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বালুভর্তি কিছু জিওব্যাগ ডাম্পিং করতে দেখা গেছে।
Advertisement
স্থানীয়রা জানায়, কমলনগরে ভাঙন রোধে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। এ উপজেলা রক্ষায় তা যথেষ্ট নয়, প্রায়োজন আরও ৮ কিলোমিটার বাঁধ। ঠিকাদার বাঁধের ভেতরে (নদীতে) ৪৫ মিটার জিওব্যাগ (বালু ভর্তি ব্যাগ) ও ব্লক যথাযথভাবে ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করে। এতে নিম্নমানের বালু ও জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অন্যত্র থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও নদীর তীর থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করায় অব্যাহত ধসের ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাধ নির্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আলেকজান্ডার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটারের কাজ শেষ করে।
এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। তার দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্নমানের বালু ও জিওব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়রা কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ওই সময় মানববন্ধন করা হয়। পরে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাশের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডারে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ সফলভাবে নির্মাণ হয়। এতে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সরকারি-বেসরকারি কয়েকশ কোটি টাকার স্থাপনা রক্ষা পায়। কিন্তু কমলনগরে এক কিলোমিটার বাঁধ বরাদ্দ হলেও সেনাবাহিনীকে দিয়ে না করিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হয়েছে।
Advertisement
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, কমলনগরের ভাঙন প্রতিরোধে এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। তীর রক্ষা বাঁধের দুই পাশেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে নির্মাণাধীন বাঁধের ওপর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া নদীতে জোয়ার ও পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবের কারণে বাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিক সংস্কার শুরু করেছি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, বাঁধ ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা অনুমোদন না হওয়ায় কাজ হচ্ছে না।
এএম/আরআইপি