ফুটবল মানেই ১১ জনের দলগত খেলা। একা কেউ ম্যাচ জিততে পারে না। ১১ জনকে সমানভাবেই পারফর্ম করতে হয়। তবে মাঝে মাঝে এই দলগত খেলা ছাপিয়েও মুখ্য হয়ে ওঠে কোনো কোনো খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স। দলগত খেলার মধ্যেও জমে ওঠে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার লড়াই।
Advertisement
ফুটবল বিশ্বকাপের আসরে যে দলই খেলতে আসুক না কেন, প্রতিটা দলেরই লক্ষ্য থাকে বিশ্বকাপের ওই সোনালি ট্রফিটায় হাত রাখা। হোক না সে তারকায় ঠাসা বড় দল কিংবা বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে আশা শক্তির দিক দিয়ে তুলনামূলক দুর্বল কেউ।
তবে এই দলগত খেলা আর বিশ্বকাপ ট্রফির পাশাপাশি আরও একটা জিনিসেও খেলোয়াড়দের থাকে বাড়তি নজর। সেটা হলো ব্যক্তিগত সফলতার পুরস্কার। ক্লাব পর্যায়ে সারা বছর ব্যস্ত থাকলেও বিশ্বকাপের বছরটার জন্য ফুটবলাররা বাড়তি আগ্রহ নিয়েই ৪টা বছর অপেক্ষায় থাকে। কারণ, এই এক বিশ্বকাপেই তো পুরো দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ মেতে ওঠে ফুটবল উন্মাদনায়।
সেখানে যদি ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখানো যায়, তবে তো রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠার সুযোগ থাকে। এখানে নিজের জাত চেনাতে পারলে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে নাম। যা কি-না ক্লাব পর্যায়ে পেতে গেলে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।
Advertisement
বিশ্বকাপে প্রতিটা ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জন্য আলাদা আলাদা পুরস্কার থাকে। যেমন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হতে পারলে গোল্ডেন বল, সর্বোচ্চ গোলদাতা হলে গোল্ডেন বুট, সেরা গোলরক্ষকের জন্য গোল্ডেন গ্লাভস কিংবা সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের জন্য উদীয়মান তারকার খেতাব। তবে এর মধ্যেও সবচেয়ে বড় অথবা সেরা হল গোল্ডেন বলের পুরস্কার। বিশ্বকাপের মত আসরে সেরা খেলোয়াড় হতে পারাটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!
১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপ শুরু হলেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারস্বরূপ দেওয়া গোল্ডেন বলের রীতি ফিফা চালু করে ১৯৭০ থেকে। সেই ১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপ থেকে শেষ ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ পর্যন্ত মোট ১২ আসরে দেয়া হয়েছে বিশ্বকাপের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ পুরস্কারটি।
এর মাঝে সবচেয়ে বেশিবার এই পুরস্কার ঘরে তুলেছে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। দুই দেশের তিনজন করে জিতেছেন সম্মানজনক পুরস্কারটি। মেক্সিকো বিশ্বকাপে ফুটবলের রাজা পেলেকে দিয়ে শুরু আর কাকতালীয়ভাবে শেষবার ব্রাজিল বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল পেয়েছেন আরেক ফুটবল সম্রাট আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি।
ব্যাক্তিগত সেরার এই পুরস্কার সবচেয়ে বেশিবার ঘরেও তুলেছেন ল্যাতিন আমেরিকার খেলোয়াড়েরা। যেখানে ল্যাতিন আমেরিকার ৭ জন খেলোয়াড় ভিন্ন ভিন্ন আসরে গোল্ডেন বল জিতেছেন, সেখানে ৫ জন ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়েরা সৌভাগ্য হয়েছে ব্যক্তিগত সেরার এই মুকুট মাথায় পরার।
Advertisement
তবে স্ট্রাইকার কিংবা মিডফিল্ডারদের হাতে সবসময় গোল্ডেন বল আশা-যাওয়া করলেও এদিক দিয়ে এক অমর কীর্তি গড়ে গেছেন সাবেক জার্মান গ্রেট অলিভার কান। বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে গোল্ডেন বল জিতেছিলেন এই কিংবদন্তি।
১৯৭০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গোল্ডেন বলজয়ীদের তালিকা
১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপ : পেলে (ব্রাজিল) ১৯৭৪ পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ : ইয়োহান ক্রুয়েফ (নেদারল্যান্ড) ১৯৭৮ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ : মারিও কেম্পেস (আর্জেন্টিনা) ১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপ : পাওলো রোসি (ইতালি) ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ : দিয়েগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা)১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপ : সালভাতোর এসসিলাচি (ইতালি) ১৯৯৪ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপ : রোমারিও (ব্রাজিল)১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপ : রোনালদো নাজারিও (ব্রাজিল)২০০২ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপ : অলিভার কান (জার্মানি)২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ : জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ : দিয়েগো ফোরলান (উরুগুয়ে) ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ : লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
এসএস/আইএইচএস/জেআইএম