অর্থনীতি

৬৩ প্রতিষ্ঠান পেল জাতীয় রফতানি ট্রফি

দেশের রফতানি বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় রফতানি ট্রফি ও সনদ পেয়েছে ৬৩টি প্রতিষ্ঠান। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফাতনির জন্য এ ট্রফি প্রদান করা হয়। রোববার (১৫ জুলাই) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ ট্রফি প্রদান করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

Advertisement

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাণিজ্য সচিব সুভাশীষ বসু, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দীন), রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করে। গেজেট অনুযায়ী, নারী উদ্যোক্তা বা রফতানিকারকের জন্য সংরক্ষিত পণ্য খাতসহ মোট ৩২ খাতের ৬৩ প্রতিষ্ঠান এবার জাতীয় রফতানি ট্রফি পায়।

২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের সেরা রফতানিকারক ট্রফি ও সনদ পেল যেসব প্রতিষ্ঠান

Advertisement

সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের ভিত্তিতে এ বছর সেরা রফতানিকারক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে হোম ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাতের জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি টানা চতুর্থবারের মতো সেরা রফতানিকারকের ট্রফি পায়।

এ বছর এগ্রো প্রসেসিং পণ্য রফতানিতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকের জন্য চূড়ান্ত হওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের। এর মধ্যে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড স্বর্ণপদক, প্রাণ এগ্রো রৌপ্যপদক এবং ময়মনসিংহ এগ্রো (প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান) ব্রোঞ্জপদক পায়।

প্লাস্টিকপণ্য রফতানিতে স্বর্ণপদক পায় বেঙ্গল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ইউনিট-৩, রৌপ্যপদক ডিউরেবল প্লাস্টিক লিমিটেড (প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান)। তৈরি পোশাক (ওভেন) খাতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো যথাক্রমে সাভারের একেএম নিটওয়্যার লিমিটেড, ডিওএইচএস বারিধারার রিফাত গার্মেন্ট লিমিটেড ও এলিফ্যান্ট রোডের অনন্ত অ্যাপারেলস লিমিটেড।

তৈরি পোশাক (নিটওয়্যার) খাতের স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পায় যথাক্রমে মতিঝিলের ফকির নিটওয়্যার্স লিমিটেড, মহাখালীর জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও স্কয়ার ফ্যাশনস লিমিটেড।

Advertisement

সুতা খাতে স্বর্ণপদক পায় মতিঝিলের কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড। রৌপ্য পায় মতিঝিলের বাদশা টেক্সটাইল লিমিটেড। ব্রোঞ্জ পায় সুফিয়া কটন মিলস লিমিটেড। টেক্সটাইল ফ্যাব্রিকস খাতে স্বর্ণ ট্রফি পায় এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড। রৌপ্য পায় প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড। ব্রোঞ্জ পায় হামজা টেক্সটাইলস লিমিটেড।

হোম ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল পণ্য খাতে স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক পায় যথাক্রমে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেড ও এসিএস টেক্সটাইল (বাংলাদেশ) লিমিটেড। টেরিটাওয়েল খাতে নোমান টেরিটাওয়েল লিমিটেড স্বর্ণ ট্রফি পায়। হিমায়িত খাদ্যপণ্য খাতে স্বর্ণপদক পায় জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস লিমিটেড, রৌপ্য মীনহার সি ফুডস লিমিটেড ও ব্রোঞ্জ পায় কুলিয়ারচর সি ফুডস লিমিটেড।

কাঁচাপাট পণ্য খাতে স্বর্ণ ও রৌপ্য ট্রফি পায় যথাক্রমে পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ও মেসার্স বাবুল জুট ট্রেডিং। পাটজাত পণ্যে স্বর্ণ ট্রফি পায় আকিজ জুট মিলস লিমিটেড। রৌপ্য ট্রফি পায় জনতা জুট মিলস লিমিটেড। ব্রোঞ্জ ট্রফি পায় দি গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার লিমিটেড।

ক্রাস্ট/ফিনিশড চামড়া পণ্য খাতে স্বর্ণ ট্রফি পায় এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রৌপ্য পায় মেসার্স ঢাকা হাউড অ্যান্ড স্কিনস লিমিটেড। চামড়াজাত পণ্য খাতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পায় যথাক্রমে পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেড, আরএমএম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এবিসি ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

ফুটওয়্যার খাতে স্বর্ণ ট্রফি পায় মেসার্স বে ফুটওয়্যার লিমিটেড। এ খাতে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পাওয়া প্রতিষ্ঠান হলো যথাক্রমে মেসার্স ফুটবেড ফুটওয়্যার লিমিটেড ও আকিজ ফুটওয়্যার লিমিটেড।

ট্রফি পাওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মনসুর জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, হেরিটেজ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রাজধানী এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ, কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড, বিডি ক্রিয়েশন, ক্লাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রডাক্টস বিডি, শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড, প্রতীক সিরামিকস লিমিটেড, মেসার্স ইউনিগ্লোরি সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড, মন ট্রিমস লিমিটেড, মেসার্স ইউনিগ্লোরি পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড ও গাজী এন্টারপ্রাইজ।

নারী উদ্যোক্তা/রফতানিকারকদের জন্য সংরক্ষিত স্বর্ণ ট্রফি পায় ফেনিক্সকো। এছাড়া রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো রফতানি ট্রফি পায়। তাদের মধ্যে রয়েছে- তৈরি পোশাক (নিট ও ওভেন) খাতে ইউনিভার্সেল জিনস লিমিটেড, প্যাসিফিক জিনস লিমিটেড ও ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড এবং অন্যান্য পণ্য ও সেবাখাতের আরএম ইন্টারলাইনিংস লিমিটেড।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে রফতানি বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং রফতানির প্রকৃতি ও পরিমাণ ব্যাপকতর পর্যায়ে উন্নীতকরণ অপরিহার্য। সরকার এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা প্রদান করে আসছে। রফতানিসহায়ক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের রফতানি বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে মাত্র। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেশের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাই মুখ্য।

বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্যে নানা প্রতিকূলতা বিদ্যমান। এর সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে বাণিজ্য প্রতিযোগীদের বিবিধ চ্যালেঞ্জ এবং দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের বিবিধ জটিলতা। এসব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে রফতানিখাত দৃপ্ত কঠিন প্রত্যয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

এ প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য রফতানি বাণিজ্য উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যথোপযুক্ত সম্মান থাকা সমীচীন। এ নৈতিক বোধ থেকে সরকার রফতানি বাণিজ্যের উন্নয়নে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় রফতানি ট্রফি ও সনদ প্রদান করা হয়।

এতে রফতানি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ও পারস্পারিক সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার আবহ সৃষ্টি করেছে। শুরুতে এটি রাষ্ট্রপতির রফতানি ট্রফি হিসেবে নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে জাতীয় রফতানি ট্রফি নির্ধারণ করা হয়।

এমইউএইচ/এসআই/বিএ/এমএস