মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন মক্কা ও মদিনার জিয়ারাত। যারা ছবি বা মিডিয়ার মাধ্যমে হজের দৃশ্য দেখে হজের আশা পোষণ করতেন; হাদিসে হজের বিবরণ শুনে মনে মনে ইবাদতের আশা পোষণ করতেন তাদের জন্য বাইতুল্লাহ ও মদিনার জিয়ারত অনেক আবেগ ও ভালোবাসার।
Advertisement
মক্কা মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে অতিরিক্ত আবেগ ও ভালোবাসায় হজের আসল কাজে যাতে অসুবিধা না হয় এবং সুস্থ শরীর ও মন নিয়ে যাতে সঠিকভাবে হজ সম্পাদন করা যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।
তাই মক্কা ও মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে হজ পালনকারীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো। যা পালন করা জরুরি-
> যারা কিরান হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধেছেন তারা ইহরাম অবস্থায় করণীয় কাজগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা। যেমন মাথার উকুন বা শরীরে পিপড়া, মশা ও মাছি পড়লে তা অভ্যাসবশত মারা যাবে না।
Advertisement
> স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে হজ করবেন। মনে রাখতে হবে ইহরাম অবস্থায় একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ও গিবতসহ নিষিদ্ধ যাবতীয় কাজ থেকে দূরে থাকা।
আরও পড়ুন > মহিলাদের হজ আদায়ে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি
> মক্কা-মদিনায় ইসলাম ও মুসলমানদের স্মৃতি বিজড়িত দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া। কাফেলাবদ্ধ হয়ে সাওয়াবের নিয়তে তা দেখা এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
> হজের প্রতিটি মুহূর্তই ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে গিয়ে অবস্থান নেয়া। বিশেষ করে জুমআর দিন নামাজ শুরুর ২ ঘণ্টা আগে হারামেরে ভেতরে গেলে জায়গা পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় হারামের ভেতরে বসার জায়গা পাওয়া যাবে না।
Advertisement
> হজে গমনকারী নারীরা অবশ্যেই তাদের মাহরামসহ বিভিন্ন ইবাদতে অংশ গ্রহণ করা। এ সব নিয়ম-কানুনগুলো জেনে নেয়া। কারণ নিয়ম-নীতিগুলো জানা না থাকার কারণে মসজিদে হারামে জামাআতে নামাজ আদায়ও সম্ভব হয় না।
> মক্কা ও মদিনায় প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের পর পর মৃত ব্যক্তির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই নারী-পুরুষ সবার জানাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম-কানুনগুলো জেনে নেয়া। কেননা জানাজা আদায়ে রয়েছে অনেক সাওয়াব।
> সারা বিশ্ব থেকে মুসলিম উম্মাহ আরাফাতের ময়দানে এক সঙ্গে মিলিত হয়। সেখানে পরস্পরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হাজিদের ইবাদতে অনেক বিষয়ে মিল থাকে না। এ সব বিষয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া যাবে না। কোনো অসঙ্গতি দেখলে তা ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করা। কারো প্রতি আক্রমণাত্মক না হওয়া। অন্যথায় চুপ থাকা। এ কথা মনে রাখা জরুরি যে, হজ হচ্ছে বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন।
> কাবা শরিফের হাতিম, মুলতাজেম, কাবার দরজা, হাজরে আসওয়াদ, রোকনে ইয়ামেনি, মাকামে ইবরাহিম, সাফা-মারওয়া পাহাড়, ঝমঝম পানির উৎসস্থল, জান্নাতুল মাওয়ালা, আরাফাতের ময়দান, মিনা, মুজদালিফা, জাবালে রহমত, মসজিদে নববির রিয়াজুল জান্নাহ, জান্নাতুল বাকি, মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাইনসহ দোয়া কবুলের স্থান গুলোতে একনিষ্ঠতার সঙ্গে দোয়া করা।
আরও পড়ুন > নিজের হজ না করে অন্যের হজ আদায় করা যাবে কি?
> ভালোবাসার দৃষ্টি পবিত্র কাবা শরিফ দেখা। যার অন্তরে কাবা শরিফের ভালোবাসা নেই; সে নিতান্তই কমজোর মুসলমান। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা শরিফকে খুব ভালবাসতেন। যা হিজরতসহ পরবর্তী সময়গুলোতে পরিলক্ষিত হতো। সুতরাং মনভরে কাবা ঘর দেখে নেয়া। কারণ দ্বিতীয়বার কাবা ঘর দেখার নসিব নাও হতে পারে।
> মসজিদে হারাম বা মসজিদে নববি যেখানেই যাবেন, আপনাকে অনেকক্ষণ মসজিদে থাকতে হবে। তাই সঙ্গে হালকা খাবার (খেজুর, বাদাম, বিস্কুট) রাখা জরুরি। মসজিদে হারামে রক্ষিত জমজম পানি বেশি বেশি খাওয়া।মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যাবে না। তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা আবশ্যক। আবেগে বেশি বেশি ওমরা বা তাওয়াফ না করা। সুস্থতার সঙ্গে ধীরে ধীরে ইবাদত-বন্দেগি করা।
> হজের আগে শরীর-স্বাস্থ্যকে সামান্য বিশ্রামে রাখা। অতিরিক্ত জিয়ারাহ বা তাওয়াফ হজের পরে করাই ভালো। প্রচুর পরিমাণে জমজমের পানি, জুস ও খেজুর খাওয়া। চলাফেরায় হাল্কা স্যান্ডেল ও ঢিলে-ঢালা জামা-কাপড় ব্যবহার করা।
> হজের সময় মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় অবস্থানকালে ব্যাগের ওজন যতটুকু সম্ভব কম রাখা। কেননা এ সফরে অনেক হাটতে হবে এবং খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হবে।
> মিনার জামরাগুলোতে (পাথর নিক্ষেপের জায়গা) বড় ব্যাগ নিয়ে যাওয়া যাবে না। এ সময় নিরাপত্তা রক্ষীরা বড় ব্যাগ থাকলে তা রেখে দেয়। মুজদালিফা থেকে কংকর সংগ্রহ করে নিতে হবে।
> আবেগের বশে জামরাতে কংকর নিক্ষেপের সময় কোনো ভাবেই জুতা, স্যান্ডেল বা বোতল নিক্ষেপ করা যাবে না। দোয়া পড়তে পড়তে শয়তানের প্রতি ঘৃণা পোষণের মাধ্যমে কংকর নিক্ষেপ করা।
> ইহরাম অবস্থায় সব সময় নিজেকে পবিত্র রাখুন। বাথরুম ব্যবহারের পর সাবান বা হাইজনিক দিয়ে জীবানুমুক্ত থাকা জরুরি। বাথরুম ব্যবহারে সময় ক্ষেপন না করা।
> ইহরামের পর কোনো অবস্থাতেই সুগন্ধি ব্যবহার না করা। এমনকি সুগন্ধিযুক্ত লোশন ও সাবান ব্যবহার না করাই উত্তম।
> আরাফাতের ময়দানে সারি সারি নিম গাছ আছে। ইহরাম অবস্থায় কোনোভাবেই গাছের ডাল ভাঙা যাবে না। অনেকেই মনের অজান্তে গাছের ডাল ভেঙে মেসওয়াক করে থাকেন। এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া।
> মদিনা থেকে মসজিদে কুবায় যাওয়ার আগে হোটেল বা বাসা থেকে ওজু করে বের হওয়া। বাসা থেকে ওজু করে বের হয়ে মসজিদে কুবায় দু’রাকাআত নামাজ আদায় করলে একটা উমরা আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন > হজ ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করবেন কেন?
> মক্কা বা মদিনার যেখনেই অবস্থান করুন না কেন, কাফেলার সবাই মিলে একটা স্থান নির্দিষ্ট করে রাখা। কোনো কারণে কেউ কাফেলা থেকে বিছিন্ন হয়ে গেলে নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষা করা। যার মাধ্যমে কাফেলার সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়। কাফেলার সন্ধান না পেলে বাংলাদেশ হজ ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কাফেলায় পৌছে দেবে।
> হজ সম্পাদনের আগে বেশি ছুটাছুটি না করা। হজ শুরু আগে মক্কায় বাইতুল্লায় নামাজ, তাওয়াফ মদিনায় মসজিদে নববিতে ইবাদতের মাধ্যমে কাটানোই উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর হজে গমনকারীদেরকে মক্কা ও মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করার তাওফিক দান করুন। হজে গমনকারীদেরকে হজে মাবরুর কবুল করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর