৬৪ ম্যাচের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটা শুধু বাকি। এবার নতুন একটি দেশকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে হট ফেবারিট ছিল জার্মানি, ব্রাজিল আর বেলজিয়াম। ভালো দলের খেতাব পেলেও খুব একটা আলোচনায় ছিলো না ফ্রান্স।
Advertisement
দুর্বলতা কেবল একটাই, এই ফ্রান্সের অভিজ্ঞতা কম। যেটার মাশুল দিতে হয়েছিলো দুই বছর আগের ইউরো ফাইনালে পর্তুগালের কাছে হেরে। ইউরো হারের পর বিশ্বকাপকে টার্গেট করা ফ্রান্স কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। এরপর রাশিয়াতে নিজেদের প্রথম ম্যাচ থেকে শুরু করে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ফ্রেঞ্চরা প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই প্রয়োজনের তাগিদে করেছে ট্যাকটিক্স পরিবর্তন।
অবশ্যই কৃতিত্বের দাবি রাখেন কোচ দিদিয়ের দেশাম্পের ফুটবল জ্ঞান। ম্যাচ বাই ম্যাচ পারফর্ম করে পাশার দান উল্টে দিয়েছে তারাই। আর নিশ্চিতভাবেই ক্রোয়েশিলার তুলনায় ফ্রান্স সামলেছে কঠিন প্রতিপক্ষ। আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, বেলজিয়াম!! নকআউটে এমন শক্ত তিন প্রতিপক্ষকে হারানোর পর ফ্রান্সের মানসিকতা অদমনীয় থাকারই কথা। আর ঠিক এখানেই ক্রোয়েশিয়া সেয়ানে সেয়ান।
তিনটি ম্যাচে ১২০ মিনিট পর্যন্ত হার না মানা মানসিকতা দেখিয়েছে ক্রোয়াটরা। এর মধ্যে দুইম্যাচে পেনাল্টি শ্যুটআউটেও জয়ী। নার্ভের জোড় ফ্রেঞ্চদের মতোই বেশ শক্ত মডরিচদের। এখন পর্যন্ত ফ্রান্স কিংবা ক্রোয়েশিয়া কোনো দলের ডিফেন্সই দুর্বলতা দেখায়নি। তবে আলাদা করে বলতেই হবে ফ্রেঞ্চ গোলকিপার-ক্যাপ্টেন হুগো লরিসের কথা। ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে আছেন তিনি।
Advertisement
দুটো দলের খেলাতেই রয়েছেই ইউরোপিয়ান প্রেসিং ফুটবলের গতি। তবে ডিফেন্স আর অ্যাটাক যত ভালোই হোক না কেনো, মিডফিল্ড সবসময় ম্যাচ জেতায়। ক্রোয়েশিয়ার রয়েছে অন্যতম সেরা মিডফিল্ড, অভিজ্ঞতায়ও এগিয়ে। মিডফিল্ডে লুকা মডরিচ আর ইভান রাকিটিচ- যারা আবার খেলেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনায়।
ফাইনাল ম্যাচের চাপ কিভাবে নিতে হয়ে জানেন তারা। মজার ব্যাপার, দুটো দলই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলছে। ক্রোয়েশিয়ার জন্য এই লাইন আপ আদর্শ। কেননা মডরিচ আর রাকিটিচ নিজেদের মধ্যে জায়গা পাল্টে নিচ্ছেন হরহামেশা। দুইজনেরই যোগ্যতা রয়েছে হোল্ডিং মিডফিল্ডার অথবা প্লেমেকার হিসেবে দলকে খেলানোর। সুযোগটার সেরা ব্যবহার করছেন কোচ জলাতকো দালিচ। উইঙে ইভান পেরিসিচ আর স্ট্রাইকার মারিও মান্দজুকিচের ফ্রিকোয়েন্ট মুভমেন্টে খালি জায়গা পাচ্ছে ক্রোয়েশিয়া। শক্তিশালী আর লম্বাটে ক্রোয়াটরা এই কি-ফ্যাক্টর গুলো কাজে লাগাতে পারে সেট পিস থেকে।
ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ড ঠেকাতে তাই বিশেষ কিছুই করে দেখাতে হবে পল পগবা আর এনগোলো কান্তেকে। কান্তে এককথায় অসাধারণ। রয়েছেন স্পটলাইটের আড়ালে। খেলাচ্ছেন দলকে। যোগ্য সঙ্গীকে পেয়ে পল পগবাও পেয়েছেন নিজের ছন্দ। বর্তমান ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাটেডের থেকে সাবেক ক্লাব য়্যুভেন্তাসেই বরং বেশি দেখা যেত এই পগবাকে। ক্রোয়েশিয়া আর ফ্রান্স দুইদলেরই অ্যাডভান্টেইজ হলো তাদের রয়েছে বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। মডরিচ আর এনগোলো কান্তে নিজ দলের হয়ে দেখাচ্ছেন সেই ক্যারিশমা।
তবে নামকরা তারকায় ঠাসা ফ্রান্সের ডিফেন্স আর ফরোয়ার্ড। আরও একটা বিষয়ে ক্রোয়েশিয়া ফ্রান্সের থেকে পিছিয়ে। কারণটা হলো প্রতিপক্ষে খেলছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। মাত্র উনিশ বছরের উইঙ্গারে পিএসজি যখন ইনভেস্ট করেছিলো ১৩৫ মিলিয়ন ইউরো তখন সেটা বাড়াবাড়ি মনে হলেও, বিশ্বকাপে এমবাপ্পে দেখিয়ে দিলেন তিনি অসাধারণ। স্প্রিন্ট, ড্রিবলিং, স্কিল, অ্যাকিউরেসি, ঠাণ্ডা মেজাজ আর স্নায়ুর জোড় সবই আছে এমবাপ্পের। আর তার পাশেই খেলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড অ্যান্তোইন গ্রিজম্যান।
Advertisement
এই এমবাপ্পেকে দেখে মনে হয়েছে অনভিজ্ঞতার দোহাই তার বেলায় অন্তত খাটে না। তবে স্ট্রাইকিঙে অলিভিয়ের জিরু অনেকাংশেই নিষ্ক্রিয় থাকছেন। অভিজ্ঞ হলেও একের পর এক সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যদিও, ডিকয় হিসেবে তাকে ব্যবহার করে অনেকাংশেই সফল হচ্ছেন ফ্রেঞ্চ বস দিদিয়ের দেশাম্প। বেলজিয়ামের বিপক্ষে জিরুর নিষ্ক্রিয়তা অনেক বেশি চোখে পড়েছে।
ফাইনালে তাই মিডফিল্ডে যুদ্ধটাই গড়ে দিবে পার্থক্য। সন্দেহ নেই ক্রোয়েশিয়ার মডরিচ আর রাকিতিচ কড়া মার্কিংয়ে থাকবেন। ক্রোয়াটদের অন্য তারকা মান্দজুকিচ জেনুইন স্ট্রাইকার। তাই তার পক্ষে নিচে নেমে দলক খেলানোটা কঠিন হবে।
অন্যদিকে, এমবাপ্পেকে সুযোগ দেয়া যাবেনা ক্রোয়েশিয়ার। কাউন্টার অ্যাটাকে এমবাপ্পের স্প্রিন্ট ভয়ঙ্কর। তার পাশাপাশি গ্রিজম্যান, কান্তে আর পগবাকেও সামলাতে হবে ক্রোয়াটদের। কাগজের হিসেবে ফ্রান্স এগিয়ে থাকবে। তবে ফুটবল গোলের খেলা। শেষপর্যন্ত তারাই জিতবে যারা গোল করবে। যেটাই হোক আশা করা যায় বিউটিফুল গেইমের ফাইনালটা হবে ধুন্ধুমার।
লেখক : স্পোর্টস অ্যানালিস্ট, স্পোর্টরাডার।
এইচআর/এমএস