মাঝে মাঝে বিদঘুটে কিছু মানুষের সঙ্গ যখন বিরক্তি ধরায়, তখন আমাদের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি। যার ছোঁয়ায় অনেক পরিচিত কষ্ট মলিন হয়ে যায়। তেমন প্রকৃতির সন্ধানে সরাইলের ধরন্তি ঘাট থেকে সোজা রাস্তাটা হাওরের বুক চিরে চলে গেছে নাসিরনগরের দিকে। শহরের যান্ত্রিকতায় ভারী হয়ে যাওয়া আপনার ভেতরটাকে তুলোর মতো হালকা করে দিতে এই বিস্তীর্ণ জলরাশি এক সুবিশাল স্তম্ভের নাম। বিস্তারিত জানাচ্ছেন নাসির আহমেদ দুর্জয়-
Advertisement
হাওরের ঘোলা জলের মায়াবী আকুলতা নিশ্চিতভাবে আপনার অতীতকে হারিয়ে দেবে বর্তমান স্রোতের তোড়ে। সরাইল বিশ্বরোড থেকে সোজা অটোরিকশা নিলেই পৌঁছতে পারবেন ধরন্তি খেয়াঘাটে। মায়াভরা এই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আপনার মন ভরে উঠবে। মাঝে মাঝে দূরে বাঁশির সুর শুনলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। পাল তোলা নৌকায় জেলেদের মাছ ধরাও দেখতে পারেন। পাড় বাঁধানো পাকা রাস্তায় খুব বেশি গাড়ি চলাচল করে না।
আরও পড়ুন হাজারিখিল অভয়ারণ্যে একদিনযে কোনো পাশে বসেই দেখতে পারেন হাওরের সৌন্দর্য। এক-দুই-তিন করে অসংখ্য ঢেউ আছড়ে পড়বে আপনার পায়ের কাছে। শুকনো মৌসুমের দু’ধারে ধান ক্ষেতের চিত্র মনে পড়লে আরো অবাক লাগবে। এই ট্যুরটা শুধু হাওরপ্রেমীদের জন্যই। হাওর কিংবা বিলের প্রতি যাদের রয়েছে আসক্তি। বর্ষা এলেই বিশাল জলরাশির প্রেমে যারা হাবুডুবু খেতে ভালবাসেন, তাদের জন্য সরাইলের ধরন্তি বিল এক অসাধারণ অনুভূতির নাম। যারা এখানে নৌকা বা ট্রলারে চড়ে ঘুরে বেড়াতে চান, তাদের জন্য বেড়ানোর খুব অবকাশ নেই। যে ট্রলারগুলো ঘাট থেকে ছেড়ে যায় তা পার্শ্ববর্তী ইটনা, মিঠামইনের দিকে যায়। তবে দরদামে যদি মিলে যায় কেউ কেউ যেতেও পারে। তবে একেবারে নিরাশ হবেন না। হাওরের রাস্তা ধরে সামনে এগোতে থাকলে আপনার চলার পথে সেতু পড়বে। ২য় সেতুর কাছেই রয়েছে স্পিড বোট। ২০ টাকা ভাড়া পড়বে জনপ্রতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে হোক বা সরাইল বিশ্বরোড থেকে হোক, আপনি যেতে পারেন কালভৈরব। বিরাট আকারের এই মূর্তিটি তার বিশাল দেহ নিয়ে বসে আছেন তার ভক্তদের সামনে। মনের ক্লান্তি ঘুচবে আপনার। তিতাস নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা কালভৈরব দেখতে মানুষের প্রতিনিয়ত আনাগোনা থাকে।
বেড়িয়ে আসতে পারেন প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের শেষ চলচ্চিত্র ঘেঁটুপুত্র কমলার সেই রাজবাড়ী থেকে। রাজা কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর নির্মাণকালীন এ অঞ্চল ত্রিপুরার অধীনে ছিল। বড়বাড়ী নামে পরিচিত এই বাড়ির সামনেই হাওরের শুরু। বাড়ির সামনের এই ঘাট থেকে সোজা তাকালে ওপার দেখা যায় না। আর ইচ্ছে হলে গোসল সেরে নিতে পারেন তিতাস আর হাওরের মিলনের এই রায় চৌধুরীর ঘাটে। জরাজীর্ণ এই বাড়িটি ঘুরে দেখতে পারেন। মনে হবে, ফিরে গেছেন সেই সময়টায়। বাড়ির ছাদে বসে দেখতে পারেন হাওরের বিশালতা।
Advertisement
যেভাবে যাবেন: যাত্রাবাড়ী বা সায়েদাবাদ থেকে যদি বাসে যান, তাহলে নামবেন সরাইল বিশ্বরোড। সেখান থেকে কালভৈরব যেতে হলে অটোরিকশায় যেতে পারবেন। ভাড়া ১০ টাকা। নামলেই পাবেন কালভৈরবের দেখা। ধরন্তি যেতে হলে আপনাকে সরাইল থেকে অটোতে যেতে হবে। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। আর বড়বাড়ী যেতে হলে সরাইল থেকে বাসে করে মাধবপুর যেতে হবে। বাসে ভাড়া নেবে ২৫-৩০ টাকা। মাধবপুর থেকে বড়বাড়ী সিএনজি রয়েছে, ভাড়া ২০-২৫ টাকা। ট্রেনে যেতে হলে কমলাপুর থেকে যেতে পারবেন শোভন চেয়ারে, ভাড়া পড়বে ১৪৫ টাকার মতো। সেখান থেকেও খুব সহজে যেতে পারবেন সব জায়গায়।
যা খাবেন: দুপুরে পেটে টান লাগলে পার্শ্ববর্তী বাজারে যেতে পারেন, হেঁটে যেতে সময় লাগবে মিনিট দশেক। হাওরের টেংরা, পুঁটি আরও বিভিন্ন মাছ রয়েছে- যার স্বাদ পাবেন এই হোটেলের তরকারিতে। ভালো লাগার নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন: থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে। বিভিন্ন দামের হোটেল রয়েছে এখানে। তবে যারা একটু কমের মধ্যে ঘুরতে চান তারা ২০০-৩০০ টাকার মধ্যেও মোটামুটি থাকার ভালো জায়গা পাবেন। সরাইল বিশ্বরোডে পাবেন ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে।
এসইউ/আরআইপি
Advertisement