প্রবাস

পর্তুগালে নাগরিকত্ব আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন

দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল। আটলান্টিক মহাসাগরের দীর্ঘ উপকূল জুড়ে পর্তুগালের অবস্থান। ইউরোপে চমৎকার দীর্ঘ বিচের জন্য বিখ্যাত পর্তুগাল। তাই দেশটিকে ‘সাগর কন্যার দেশও’ বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্তুগালে দর্শনার্থীদের ব্যাপক আগমন ঘটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যরূপে যেমন সাবলীল পর্তুগাল তেমনি পর্তুগালকে ইউরোপে অভিবাসীদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেখানে অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করে, সেখানে পর্তুগাল বৈধ পন্থায় প্রবেশকারী অভিবাসীদের জন্য সহজতম শর্তে রেসিডেন্স প্রদান প্রক্রিয়া চালু রেখেছে।

Advertisement

সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে পর্তুগাল। গত ৫ জুলাই পর্তুগালের সরকারি প্রেস ‘দায়রা দ্য রিপাবলিকায়’ নতুন এই সংশোধনীর গেজেট প্রকাশিত হয়।

গেজেট সূত্রে জানা যায়, পর্তুগিজ সংসদে অভিবাসী আইন সংশোধিত হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, অভিবাসী মা-বাবা পর্তুগালে দুই বছর ধরে বৈধভাবে বসবাস করলে পর্তুগালে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানেরা সরাসরি নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন।

তার মানে, মা-বাবা যে কোনো একজনের বৈধ অভিবাসন স্বীকৃতি থাকলেই জন্ম নেয়া সন্তান পর্তুগিজ নাগরিকত্ব পাবেন।

Advertisement

এছাড়াও নতুন আইনে পর্তুগিজ কলোনি অন্তর্ভুক্ত ছাড়া যে সকল সাধারণ অভিবাসীরা রয়েছেন, তাদের নাগরিকত্ব আবেদনের সময়সীমাও আগের চেয়ে কমিয়ে আনা হয়েছে। পূর্বে অভিবাসীরা অস্থায়ী নাগরিকত্ব পাবার ছয় বছর পূর্ণ হলে পর্তুগিজ স্থায়ী নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু নতুন এই সংশোধনীতে আবেদনের সময়সীমা এক বছর কমিয়ে আনা হয়েছে। পূর্বের ছয় বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পূর্ণ হলেই অভিবাসীরা পর্তুগিজ নাগরিত্বের আবেদন করতে পারবেন।

তবে এ বিষয়ে পর্তুগালের সবকটি গণমাধ্যম দায়িত্ব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেও সরকারি গেজেটে বিষয়টি এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি।

সংশোধনীতে আরেকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। যাদের পূর্বপুরুষ পর্তুগিজ ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে দ্বিতীয় প্রজন্ম নাগরিকত্ব গ্রহণ না করে দীর্ঘ সময় অন্যত্র বসবাস করছেন, তারা এবং তাদের সন্তানরা চাইলে এখন আবার পর্তুগিজ নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।

এদিকে নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি পর্তুগালে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ হাজার ভিসাবিহীন অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতা দানের ব্যাপারেও সংসদে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। পর্তুগালের অন্যতম তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল- বর্তমান সরকারি দল পর্তুগিজ স্যোসালিস্ট পার্টি, পর্তুগিজ কমিউনিস্ট পার্টি ও বামদল ব্লক দ্য স্কেরদা অভিবাসীদের বিনাশর্তে বৈধতা দানের পক্ষে কথা বলেছেন। কয়েকজন সাংসদ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন।

Advertisement

কিছুদিন ধরে পর্তুগালের প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনাম ছিল এটি। তাদের ধারণা, খুব শিগগিরই সংসদ অধিবেশনে এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো ঘোষণা আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ভিসাবিহীন অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রথমে তিনমাসের অস্থায়ী ভিসা প্রদান করে পরবর্তীতে বৈধ রেসিডেন্স প্রদান করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিও কস্তা কিছু দিন আগে অবশ্য অভিবাসন বিষয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগী হতে পর্তুগালের আরও অভিবাসী প্রয়োজন। সে হিসেবে বছরে পর্তুগালের ৭৫ হাজার নতুন অভিবাসী প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে পর্তুগালের ফাউন্ডেশন ফ্রান্সিসকো ম্যানুয়েল দোস সান্তোস।

এদিকে বিশ্ব জনসংখ্যা জরিপ বলছে, বয়স্ক হার বেশি হওয়ায় পর্তুগালে জন্মহারের চেয়ে মৃত্যুহার বেশি। সে হিসেবে ২০৫০ সালে পর্তুগালের জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৭ মিলিয়নে। বর্তমানে যা ১০ মিলিয়ন। তাই পর্তুগালের সরকারও এটি নিয়ে শঙ্কিত। এরই মধ্যে শিশু জন্মহার বৃদ্ধিতে প্রতিটি শিশু সন্তানের জন্য ১০ হাজার ইউরো করে সহায়তা ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি করেছে একটি বিরোধী দল। যদিও দাবিটি কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি।

তাই অভিবাসীদের কাছে স্বর্গরাজ্য খ্যাত দেশ পর্তুগালকে হয়তো ভরসা রাখতে হবে সেই অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিই।

এসআর/এমএস