জ্যামাইকায় দ্বিতীয় দিনের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। আবু জায়েদ রাহী ও মেহেদি হাসান মিরাজের বোলিংয়ে প্রথম সেশনেই অলআউট করা হয়েছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু ধারাবাহিক হতাশাজনক ব্যাটিংয়ে দিন শেষে আর প্রথম সেশনের হাসিটা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ।
Advertisement
প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং ভরাডুবির ধারা চলমান রেখে দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৯ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৩৫৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়লেও ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার সাকিবদের আবার ব্যাটিংয়ে নামাননি।
শেষ বিকেলে স্বাগতিকরা ব্যাট করতে নেমে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহ, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের উইকেট হারিয়েছে। দিনশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ১ উইকেট ১৯ রান। বাংলাদেশের চেয়ে তারা এরই মধ্যে এগিয়ে ২২৪ রানে।
মিরাজ-রাহির বোলিংয়ে দ্বিতীয় দিনে মাত্র ৫৯ রানে ৬ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ভালো বোলিংয়ে সুখস্মৃতি নিয়ে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু টপঅর্ডারে লিটন কুমার দাশ ও মুমিনুল হক সেই সুখ বেশিক্ষণ থাকতে দেননি। একই ওভারে সাজঘরে ফেরেন দুজন।
Advertisement
আউট হওয়ার আগে লিটন ১২ রান করলেও টানা দ্বিতীয় ইনিংসে খালি হাতে ফেরেন মুমিনুল। এই সিরিজে এখন পর্যন্ত মুমিনুলের রান যথাক্রমে ১, ০ ও ০। মাত্র ২০ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সামনে প্রথম টেস্টের মতো অল্পেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা।
সেখান থেকে চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামাল দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বন্ধু তামিম ইকবালের সঙ্গে গড়েন সিরিজে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রানের জুটি। দলীয় ৭৯ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৩২ রানে ফেরেন সাকিব।
মুশফিকের আগে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে এসে সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আবারো একই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। পরে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে খানিক লড়াইয়ের আভাস দেন তামিম ইকবাল।
কিন্তু দলীয় ১১৭ রানের মাথায় ব্যক্তিগত অর্ধশত থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থাকতে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যান তামিম। পরের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা পড়েন আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান নুরুল হাসান। ইনিংসে তৃতীয়বারের মতো ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
Advertisement
তামিম ফিরে যাওয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। দলীয় ১২৮ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২৪ রানে ফেরেন তিনি। শেষদিকে তাইজুল ইসলাম ৪টি চারের মারে ১৮ বলে ১৮ রানের ইনিংস খেললে দেড়শ’র কাছাকাছি যায় বাংলাদেশ। তবে ১৪৯ রানেই থেমে যেতে হয় তাদের।
স্বাগতিকদের পক্ষে সর্বোচ্চ পাঁচটি উইকেট নেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। এছাড়া শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও অভিষিক্ত পেসার কেমো পল নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি আর আবু জায়েদ রাহীর দুর্দান্ত গতিতে নাকাল হয় ক্যারিবীয়রা। দু’জনই দ্বিতীয় দিনে ৫টি উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। আগের দিন ১টি উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় দিন নেন আরও একটি।
২৯ ওভার বল করে ৯টি মেডেন এবং ৯৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট দখল করেন মিরাজ। তার ক্যারিয়ারে এটা চতুর্থবারের মত এক ইনংসে ৫ কিংবা তার বেশি উইকেট নেয়ার ঘটনা। ১৮ ওভার বল করে ৭টি মেডেন এবং ৩৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন আবু জায়েদ রাহী এবং ২৫ ওভার বল করে ৪টি মেডেন ও ৮২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম।
দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নামার পর শিমরন হেটমায়ার আগের দিনের ইনিংসের সঙ্গে মাত্র ২ রান করেন। আউট হয়ে যান ৮৬ রানেই। দিনের শুরুতেই আবু জায়েদ রাহীর গতির কাছে পরাস্ত হন হেটমায়ার। তার বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে জমা দেন নুরুল হাসান সোহানের হাতে।
এরপর রোস্টন চেজকেও ফিরিয়ে দেন রাহী। ২০ রান করা রোস্টন এলবিডব্লিউর শিকার হন। শেন ডওরিচ মাত ৬ রান করে তাইজুল ইসলামের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান।
কেমো পল এবং মিগুয়েল কামিন্স মেহেদী হাসান মিরাজের পরপর দুই বলে আউট হয়ে যান। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত আর হ্যাটট্রিক হয়নি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের উইকেট তুলে নেন আবু জায়েদ রাহী। ৩৫৪ রানে থেমে যায় স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস।
এসএএস/এমএস