রাজনীতি

সরকারের হুমকির মুখে ইসির আত্মসমর্পণ : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না- এমন নির্দেশনা থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইসির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠক শেষে সিইসি এ কথা জানান। এ সিদ্ধান্ত সরকারের হুমকির মুখে ইসির প্রতিরোধহীন আত্মসমর্পণ। আগামী নির্বাচনগুলোতে সরকার খুলনা-গাজীপুর মার্কা নতুন মডেলের ভোট সন্ত্রাসের নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতেই ইসি তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘যে দেশে আইনের শাসন নেই, সেদেশে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যদের ভোটারদের সঙ্গে নয়, বরং সরকারের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলতে হয়। সুতরাং আগামী নির্বাচনগুলো কোন রঙ ও রূপে আত্ম প্রকাশ করবে, তা এখনই খুব সহজে অনুমান করা যায়।’ শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘তিন সিটিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্লজ্জভাবে সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলা-হামলার হুমকির মুখে নেতাকর্মীদের সিটি কর্পোরেশন নিজ এলাকার বাইরে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আর গ্রেফতারের হিড়িকতো চলছেই। রাজশাহীতে ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচনী অনাচারে লিপ্ত কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি ও গোয়েন্দা পুলিশের ওসির প্রত্যাহার চাইলেও নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কর্মকর্তারা অভিযোগে কান না দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন। রাজশাহীতে সারা শহরজুড়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা এমনভাবে পোস্টার সেঁটেছে যে, সেখানে অন্য কারও পোস্টার লাগানোর কোনো জায়গাই নেই। সিলেটে ধানের শীষের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থেকে থানার সামনে অনশন করতে হচ্ছে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য।’

তিনি বলেন, ‘বরিশাল ও রাজশাহীতে সরকারি দলের পক্ষ থেকে কালো টাকার ছড়াছড়ি চলছে। অস্বাভাবিক টাকা খরচ দৃশ্যমান হলেও সেখানে নির্বাচনী কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। বরিশালে বিএনপির সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে, মাইক ভাঙচুর করছে, সমর্থকদের মারধর করছে। খুলনা ও গাজীপুরে অনুসৃত নীতি বাস্তবায়ন করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই ইসির অধীনে কখনওই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

Advertisement

খালেদা জিয়ার কারাবন্দি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রিজভী বলেন, ‘সরকারপ্রধান যে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে খালেদা জিয়াকে যে কারাগারে আটকে রাখবেন, তার আরও প্রমাণ রয়েছে। যেমন- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিগত কয়েক বছর ধরে বলে আসছেন, বেগম জিয়ার জন্য কারাগারের সেল প্রস্তত করা হয়েছে।’ এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দশ্যে বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, আপনি যতই ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকুন না কেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না।’

রিজভীর প্রশ্ন, হাইকোর্টের রায় থাকায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা সম্ভব নয় বলে গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে তিনি ছাত্রদের তুমুল আন্দোলনের মুখে কোটা বাতিলের কথা কেন বলেছিলেন? 

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি (প্রধানমন্ত্রীর) ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে ৭১’এর রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রমের উপর ছাত্রলীগ-যুবলীগকে দিয়ে হামলা করাতেন না। এ হামলা পরিকল্পিত। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা করা হয়েছে।’

কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে যে কোনো ঘোষণা মানেই সেটি আইনের সমতুল্য এবং তা কার্যকর হতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল চায়নি, তারা কোটা সংস্কার চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যে এটা এখন সুস্পষ্ট যে, তিনি ছাত্র আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই সেদিন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেদিন আমরা বলেছিলাম, কোটা বাতিলের ঘোষণা একটা ধাপ্পাবাজি। আন্দোলনে ছাত্র নেতাদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই দিনে প্রধানমন্ত্রী ম্যাকিয়াভেলি চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঈদের পর আবারও ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছেন দমন-পীড়নের নিষ্ঠুর পথ।’

Advertisement

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এসআর/এমএস