১৯৪২ সাল। অভিভক্ত বাংলা। এনট্র্যান্স পাস করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কলেজটির বর্তমান নাম মওলানা আজাদ কলেজ। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজেই ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি। এই কলেজে পড়াকালীন উদারচিত্তের বড় মাপের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। রাজনীতির গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুজিব মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কলকাতা ইসলামীয়া কলেজে পড়াকালীন নিজের জীবন বিপন্ন করে দুর্ভিক্ষ ও দাঙ্গাপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কলকাতার ছাত্রজীবনে মানুষের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা, দেশাত্মবোধ ও গণতন্ত্রের যে-পাঠ গ্রহণ করেছিলেন, তাতেই ইহিতাসের বিশ্বনেতার মর্যাদায় আসীন হন শেখ মুজিবুর রহমান।বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বারবার স্মৃতিচারণ করেছেন কলকাতার সেই উজ্জ্বল ছাত্রজীবন এবং ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে রাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও হতে পারে, তা বঙ্গবন্ধুর জবানিতে কলকাতার ইসলামীয়া কলেজ অধিক গুরুত্ব বহন করে। তাই এবার ওপার বাংলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেন আরেকটু আপন করতে চাইছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি চেয়ার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চেয়ারের প্রস্তাবটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনায়া শেখ হাসিনাকে দিয়ে চেয়ারটি উদ্বোধন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন মমতা। এর জন্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাবে কলকাতা রাজ্য সরকার। অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির দুই প্রতিবেশী অঞ্চলের মধ্যকার সম্পকের্র শীতলতা কাটিয়ে উঠতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। তবে এই ঘটনা মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন গলিয়ে সম্পর্কের উষ্ণতা ছড়াবে বিষয়টি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বঙ্গবন্ধু চেয়ারের মর্যাদা হয়ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কেও বিশেষ মর্যাদার আসনে আসীন করবে। বাংলাদেশ নামক যে জাতিরাষ্ট্রটি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে রাষ্ট্র জন্ম দিয়ে তিনি নিজেকে ভৌগোলিক সীমানার প্রাচীরে আটকে রাখেননি। তিনি ছিলেন বিশ্ব মানবতার, বিশ্বনেতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক-এর সঙ্গে। অধ্যাপক আরেফিন বলছিলেন, ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি শুধু একটি ভূখণ্ডকে স্বাধীন করেননি, একটি ভাষা-সংস্কৃতিকেও মুক্তি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য বিশেষ চেয়ার স্থাপন করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আরো সম্মানিত এবং সমৃদ্ধ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমরা সাধুবাদ জানাই। অধ্যাপক আরেফিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা, সাহসিকতা মূল্যায়ন করার যোগ্যতা আমাদের নেই। এ কারণেই ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছিল। আমরা সেই অন্যায্য সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করেছি। বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানিত হয়েছে, যেমনটি হচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।এএসএস/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement