অভিনেতা দিলদারের কথা মনে আছে? তিনি ছিলেন সিনেমার দুঃখ ভুলানো মানুষ। ছবি দেখতে দেখতে কষ্ট-বেদনায় মন যখন আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো তখনই তিনি হাজির হতেন হাসির সুবাস ছড়িয়ে। তার হাঁটা-চলা, বাচন ভঙ্গি, অভিনয়ের সাবলীলতার পরতে পরতে থাকতো আনন্দের ছড়াছড়ি।
Advertisement
এমনকি অনেক চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যে তার সংলাপ দিয়েই কাহিনীর শেষ হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। আশি-নব্বই দশকের চলচ্চিত্রে তিনি আর কৌতুক হয়ে ওঠেছিলো সমার্থক।
বলছি নন্দিত কৌতুক অভিনেতা দিলদারের কথা। একটা সময় ছিলো যখন, কেউ কাউকে হাসালেই তাকে ‘দিলদার’ উপাধি দেয়া হতো। বলা চলে প্রবাদে পরিণত হয়েছিলেন এই অভিনেতা। অনেকদিন হলো তিনি আর বেঁচে নেই। নিরবেই চলে যায় এই অভিনেতার মৃত্যুদিন। আজ ১৩ জুলাই দিলদারের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।
২০০৩ সালের এই দিনে ৫৮ বছর বয়সে তিনি জীবনের মায়া কাটিয়ে চিরদিনের মতো পৃথিবী ত্যাগ করেন। দেখতে দেখতে কেটে গেল ১৫টি বছর। মুছে গেছেন তিনি সবখান থেকে। নতুন প্রজন্মের দর্শকও তাকে চেনেন না খুব একটা। তবে দিলদার থেকে গেছেন অসংখ চলচ্চিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয়ে; কৌতুক অভিনেতার কিংবিদন্তি হয়ে।
Advertisement
১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন দিলদার। তিনি এসএসসি পাশ করার পর পড়াশোনার ইতি টানেন। ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই যদি ৫৮ বছর বয়সে এ পৃথিবী ছেড়ে তিনি চলে না যেতেন, তাহলে হয়তো আজও উপহার দিতেন নতুন কোনো হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র।
১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ নামের চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন দিলদার। আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি। অভিনয় করেছেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলীর জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্রে। দিলদারের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, তাকে নায়ক করে নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র। নূতনের বিপরীতে এই ছবিতে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো ছবিতে ঠাঁই পাওয়া গানগুলো।
সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন। জীবনভর অভিনয় করে যে বছর সেরার স্বীকৃতি পেলেন সে বছরই তিনি দেশ বিদেশে বাংলা ছবির কোটি কোটি দর্শককে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন আর না ফেরার দেশে। তার মৃত্যুর পর আরও অনেক কৌতুক অভিনেতাই এসেছেন, আবার সময়ের স্রোতে হারিয়েও গেছেন। কিন্তু কেউই দিলদারের অভাব পূরণ করতে পারেননি। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে জাগো নিউজ।
এমএবি/এমএস
Advertisement