# আড়তে বাড়তি দামেই চাল বিক্রি চলছে# পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে খুচরাতে দাম কমছে না# অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শিগগিরিই অভিযান চালাবে ভোক্তা অধিদফতর# চাল ব্যবসায়ী নেতাদের ডাকা হয়েছে : অধিদফতর
Advertisement
দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাতালে চালের দাম বাড়েনি। বরং চাল ভেদে কয়েক জায়গায় দাম কমেছে। কিন্তু আমদানি করা চালে শুল্ক আরোপের অজুহাতে আড়তগুলো সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছে। সেই বর্ধিত দামেই চাল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে তারা জিম্মি। তাদের কারণেই খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পরই চালের দাম কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বেড়ে যায়। এক মাসের ব্যবধানে সেই চলের দাম আর কমেনি। এই বাড়তি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণেই খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
এদিকে কুষ্টিয়া, শেরপুর ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাতাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম চাতালগুলোতে মোটেও বাড়েনি। বরং বড় আড়তদাররা চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা দামে কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন। এতে চাতালে চালের দাম উল্টো কিছুটা কমেছে।
Advertisement
শেরপুরের চাতাল ব্যবসায়ী খুরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, মোকামে চাল কিনছে না। ফলে আমরা যারা কম পুঁজির ব্যবসায়ী তারা দামে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও চাল বিক্রি করছি। এর মানে চালের দাম গড় হারে কমেছে।
তিনি বলেন, আগে মোটা চালের (আটাশ) দাম ছিল মণপ্রতি ১৫ ‘ থেকে সাড়ে ১৫শ’, এখন সেটা ১৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল ছিল মণপ্রতি ২ হাজার থেকে ২১শ’ টাকা, এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ১৯শ’ টাকায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাতালে চালের দাম না বাড়লেও যদি পাইকারি বাজারে দাম বাড়ে, তাহলে এর পেছনে কারসাজি রয়েছে। ভোক্তাদের জিম্মি করে লালে লাল হচ্ছেন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। অতিরিক্ত লাভের টাকা তাদের পকেটেই ঢুকছে। চাতাল বা খুচরা ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে কারওয়ার বাজারের আড়তদার ‘কাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্স’ এর প্রোপাইটর জসিম উদ্দীন বলেন, বাজেটের কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন বাজার স্থির আছে।
Advertisement
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একবার কোনো জিনিসের দাম বেড়ে গেলে, কমতে কিছুটা সময় লাগে। এছাড়া ট্রাক ভাড়া, লোড-আনলোডসহ বিভিন্ন জায়গায় খরচ বেড়েছে। ফলে চালের দাম কমানো যাচ্ছে না।
একই ধরনের কথা বলেনছেন বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির প্রোপাইটর হাজী শহীদুল্লাহ সরকার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চাতাল ব্যবসায়ীরা বলছেন- ধানের দাম বেড়ে গেছে। ফলে তারা চালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য মাস খানেক আগে চালের দাম বস্তা প্রতি ৫০-১০০ টাকা বেড়েছিল। কিন্তু এখন তো বাজার স্থির আছে। দাম আর বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না।
চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে সরকারি বাজার মনিটরিং সংস্থা- টিসিবির প্রতিবেদনে। সংস্থাটি বলছে- এক মাস আগে সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬৬ টাকায়। একমাস পর মঙ্গলবার সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৬ টাকায়। এ অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা। এছাড়া নাজিরশাইল ৬০-৬২ টাকায়, যা আগে ছিল ২ টাকা কম। একই অবস্থা মোটা চালের দামের ক্ষেত্রে। রাজধানীর বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৮-৪২ টাকায়।
রাজধানীর বাজারগুলোতেও এই দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। মিরপুরের ‘মোল্লা রাইস’ এজেন্সির মালিক আজিজ মোল্লা বলেন, ঈদের পরে চালের পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছিল, এখনও সে দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। কমেওনি বাড়েওনি। তিনি বলেন, ওই সময় পাইকারি বাজারে সব চালের দাম বস্তায় ৫০-১০০ টাকা বেড়েছিল। এখনও সেটাতেই স্থির আছে।
তিনি জানান, বর্তমানে নাজিরশাইল চাল ভালোটা বিক্রি হচ্ছে- ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকা প্রতি বস্তা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ থেকে ২৬৫০ টাকায়। সহসাই দাম না কমলেও সেটা আর বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন তিনি।
বাজারের এই অবস্থার জন্য সরকারের মনিটরিং দুর্বলতাকে দায়ী করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এর আগে বলেছিলেন, ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার মানসিকতার কারণে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উচিত- শক্ত হাতে এসব বিষয়ে মনিটরিং করা।
তবে চালের বাজার নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ বিষয়ে অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ব্যবসায়ী নেতাদের ডেকেছি। এই বিষয়ে তাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। শুধু রাজধানীর বাজারে দাম বাড়বে এটা যৌক্তিক হতে পারে না।
তিনি জানান, উৎপাদক পর্যায়ে আমরা অভিযান করছে। কয়েকদিন আড়ে সিটি গ্রুপকে ১ লাখ টাকা জড়িমানা করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে, যেন চালের বস্তার গায়ে দাম লেখা থাকে। খুব শিগগিরিই আড়তগুলোতেও অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে আমদানি করা চালের ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন মুহিত। গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতে চাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে সর্বোচ্চ আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ পুনঃআরোপ করার প্রস্তাব করছি।’
এর আগে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়া চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত বছরের ২০ জুন আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর দু’দফায় চাল আমদানিতে নির্ধারিত ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এবার বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং ঘাটতির তুলনায় ১০ গুণের বেশি চাল আমদানি হওয়ায় কৃষকের স্বার্থ চিন্তা করে পুনরায় সরকার চাল আমদানির ওপর ২৮ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়।এরপর খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি চালের মূল্য ২-৩ টাকা বেড়ে যায়।
এমএ/এমবিআর/এমএস