কৃষি ও প্রকৃতি

তিতির পালনে লাভবান হওয়ার সুযোগ

তিতির পাখি গৃহপালিত পাখির মতোই। হাঁস-মুরগির মতোই তা পালিত হয়ে থাকে। তিতির পাখি গ্রামাঞ্চলে ‘চায়না মুরগি’ নামে পরিচিত। তবে দিন দিন তা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ তিতির পাখি পালনে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

Advertisement

আগমন: তিতির পাখি মূলত আফ্রিকান। ইংরেজদের হাত ধরে এ পাখি ইউরোপ থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আসে।

বিপন্ন প্রায়: বর্তমানে আইইউসিএন এ প্রজাতিকে আশঙ্কাহীন বলে ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশে এরা প্রায় বিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। গত ৩ দশক আগেও তিতির পাখি গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগির সঙ্গে চলাফেরা করতো। কিন্ত হঠাৎ করেই এ পাখি আর দেখা যায় না। বর্তমানে এ পাখি গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে না থেকে ঢাকার পাখি বিতানে দেখা যায়। সেই খাঁচার প্রতিটি তিতির পাখি ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

> আরও পড়ুন- চাকরি ছেড়ে কোয়েলেই সফলতা 

Advertisement

উদ্যোগ: ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি খামারে তিতির পাখি পালন, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের উদ্যোগে তিতির পাখি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে অধ্যাপক ড. সুবাস ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন ও তা পালনের সব ধাপ এই গবেষণা খামারে সম্পন্ন করেছেন।

বিতরণ: দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে বিনামূল্যে পাখি বিতরণ করছেন। এখন উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিতির পালনকে ছড়িয়ে দিতেও কাজ করছেন ড. সুবাস। ইতোমধ্যে তিতির পালনের জন্য খামারিরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।

লালন-পালন: দেশি মুরগির মতোই এদের লালন-পালন করা যায়। তিতির পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশি। সংক্রমণ বা পরজীবী সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। আলাদা কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ দেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। এমনকি এদের সম্পূরক খাদ্যের চাহিদাও কম। প্রতিকূল পরিবেশে এরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।

> আরও পড়ুন- কেন কবুতর পালন করবেন

Advertisement

মাংস উৎপাদন: দেশি মুরগি যেখানে ৬ মাসে সর্বোচ্চ ১ কেজি ওজনের হয়, সেখানে তিতির পাখি দেড় কেজি বা তার বেশিও হয়ে থাকে। আবার একটি দেশি মুরগি বছরে ৫০-৬০টা ডিম দেয়, একটি তিতির পাখি বছরে প্রায় ১০০-১২০টি ডিম দেয়।

লাভজনক: তিতির অত্যধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন পাখি। এছাড়া এর বাজার মূল্য দেশি হাঁস-মুরগির চেয়ে অনেক বেশি। তাই এটি লালন-পালন করা দেশি মুরগির চেয়ে লাভজনক। তিতির পাখি পালন দারিদ্র্য বিমোচনে যেমন সহায়ক তেমনি বিপন্নপ্রায় এ প্রজাতির সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখবে।

এসইউ/আরআইপি