রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ডাগআউট থেকে ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলাররা তুমুল উল্লাসে ফেটে পড়ে। দৌড়ে প্রবেশ করে মাঠে এবং জড়িয়ে ধরে ২-১ গোলে ম্যাচজয়ীদের। অন্যদিকে মাঠের অন্য কোণে তখন ভিন্ন পরিস্থিতি। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে ইংলিশ ফুটবলাররা। চোখ ভেসে উঠেছে অশ্রুতে।
Advertisement
হ্যারি কেইন, মার্কাস রাশফোর্ড, জন স্টোনসদের চোখের পানি তখন মুছে দেয়ার কেউ নেই। গ্যারেথ সাউথগেট অনেক শান্ত। তিনি এগিয়ে এলেন। সান্ত্বনা দিলেন। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাই কাজে আসলো না। ইংলিশ ফুটবলারদের চোখের অশ্রুধারা মোছার মতো যথেষ্ট ছিল না কোনো সান্ত্বনাই।
লুঝনিকি গ্যালারিতেও চলছিল তখন রোদন। যে দর্শকরা কিছুক্ষণ আগেও দলের জন্য গলা ফাটিয়েছিল, তারাই কি না সেই দলের পরাজয়ে কান্না লুকিয়ে রাখতে পারলো না। গ্যালারিতেও উঠলো কান্নার রোল। অবিশ্বাসভরা চোখ নিয়ে তারা তাকিয়ে আছে মাঠের দিকে। দর্শকদের যেন কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিল না, ইংল্যান্ড হেরে যেতে পারে কিংবা তারা হেরে গেছে।
১৯৯০ সালের পর ২৮ বছর বিরতি দিয়ে প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠার পরই ইংলিশ মিডিয়ায় শুরু হয় গ্যারেথ সাউথগেটদের উচ্চসিত প্রশংসা। সেমিফাইনাল খেলার আগেই বিশ্বকাপ জয় করে ফেলেছে যেন ইংলিশরা। সবারই চিন্তা-চেতনা, মগজে-মননে প্রবেশ করে গিয়েছিল, ১৫ জুলাই লুঝনিকি স্টেডিয়ামে সোনালি ট্রফিটা উুঁচু করে ধরবেন হ্যারি কেইনই।
Advertisement
১৯৬৬ সালের পর ৫২ বছর বিরতি দিয়ে আবারও বিশ্বজয়ীর আসনে বসবে ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালে নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের পর যেভাবে ট্রফি হাতে ধরা অধিনায়ক ববি মুরকে কাঁধে করে হেঁটেছিলেন সতীর্থরা, সেভাবে ছবি এডিট করে ববি মুরের জায়গায় হ্যারি কেইনকে বসিয়ে দিয়ে উৎসবের প্রস্তুতিও সেরে রেখেছিল ইংলিশরা।
ট্রফি জয় নিশ্চিত- সুতরাং, উৎসবের প্রস্তুতি তো আগে থেকেই নেয়া যায়। ইংলিশরা সেমিফাইনাল জয় নয়, বুধবার ট্রফি জয়ের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল মাঠে। শিরোপা উৎসব করবে তারা। ক্রোয়েশিয়া তো হ্যারি কেইনদের সামনে নিশ্চিত উড়ে যাবে।
কিন্তু নিয়তি হয়তো ইংরেজদের এতসব পাগলামি দেখে আড়ালে হাসছিল। বলছিল, শেষ বাঁশি বাজার পর না হয়, উৎসবটা করো! লুঝনিকি স্টেডিয়ামে উপস্থিত ইংলিশ সমর্থকদের বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কেইরান ট্রিপার। ম্যাচের ৫ম মিনিটেই দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে ক্রোয়েশিয়ার জালে বল জড়িয়ে দিয়ে।
কিন্তু ওই এক গোলই যেন সারা ইংল্যান্ডের জন্য। হ্যারি কেইন, হেসে লিংগার্ড, রাহিম স্টার্লিং, হ্যারি মাগুইরে, কিংবা মার্কাস রাশফোর্ডরা কোনোভাবেই পাচ্ছিলেন না ক্রোয়াটদের জালের দেখা। দু’একবার বল নিয়ে বিপজ্জনক এরিয়ায় চলে গেলেও বল ক্রোয়াটদের জালে প্রবেশ করানোর মতো বুদ্ধিমত্তাই যেন দেখা যাচ্ছিল না কারও মধ্যে।
Advertisement
অন্যদিকে ক্রোয়াটদের একের পর এক আক্রমণ সামলাতেই যেন ব্যস্ত হয়ে ইংলিশরা। প্রথমার্ধ ১-০ গোলের লিড ধরে রাখতে পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে এসে সেই লিড আর ধরে রাখতে পারেনি। ইভান পেরিসিচের অসাধারণ গোলে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া।
খেলার নির্ধারিত সময় শেষ হলো ১-১ সমতায়। বিজয়ী নির্ধরাণে ম্যাচ গড়ালো অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। এই সময়ে এসেই আসল কর্মটি সেরে দিলেন মারিও মানজুকিচ। বামপায়ের অসাধারণ গোলে বিদায় নিশ্চিত করে দিলেন ইংল্যান্ডের এবং প্রথমবারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করলেন ক্রোয়েশিয়ার। ম্যাচ শেষে চোখের জলে বিদায় নেয়া ছাড়া তো আর কোনো উপায় ছিল না ইংল্যান্ডের।
আইএইচএস/বিএ