কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ৪শ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৬ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত টানা বর্ষণে পাহাড় ধস, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় কোমেনের কারণে জেলার নানা খাতে এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ সময় প্রাণহানি হয়েছে ১৮ জনের।কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তৈরি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, জেলায় গত ২৫ জুন শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এতে প্রথম দফায় বন্যা কবলিত হয় জেলার ৪ উপজেলার ৯০ শতাংশ এলাকা। এ ক্ষতি এবং ভোগান্তি শেষ না হতে দ্বিতীয় দফায় গত ২৬ জুলাই আবারো শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এর মধ্যে দেখা মিলে ঘূর্ণিঝড় কোমেনের। ১ আগস্ট পর্যন্ত ছিল বর্ষণ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দ্বিতীয় দফায় ভারী বর্ষণে জেলার ৮টি উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়নে ৪ শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এতে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। যার মধ্যে কক্সবাজার সদরে ৭ জন, রামুতে ১ জন, চকরিয়ায় ৪ জন, মহেশখালীতে ৪ জন ও টেকনাফ উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়। ৬৬ ইউনিয়নের মধ্যে কক্সবাজার সদরে ৮টি, রামুতে ১০টি, চকরিয়ায় ১৯টি, পেকুয়ায় ৭টি, মহেশখালীতে ৮টি, কুতুবদিয়ায় ৬টি, উখিয়ায় ১টি ও টেকনাফের ৭টি ইউনিয়ন। এসকল এলাকার ১২৫৬ দশমিক ৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় খুব বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭২০ জন, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮ শত জন, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৫ জন মানুষ। আহত হয়েছেন ৯০৪ জন। এ সময় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪১২টি পরিবারের ক্ষতি হয়। যেখানে ২৫ হাজার ৬২২টি সম্পূর্ণ এবং ৮৪ হাজার ৫ শতটি বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়। ওই সকল পরিবারের ৩ হাজারের বেশি গবাদি পশু মারা গেছে। প্রতিবেদনে ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে, ৩শ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ ৬ দিনের দুর্যোগে ২ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার হাঁস-মুরগি, সম্পূর্ণরূপে ৯ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫ শত টাকার ফসলাদি বিনষ্ট এবং ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ৬ শত টাকার ফসলাদি আংশিক, ১ লাখ ১২ হাজার টাকার লবণ, ২৭৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকার চিংড়রি ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ১০৭টি মাদরাসা, ১টি কলেজ ধ্বংস হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২৪৪টি স্কুল-মাদরাসা ও ৬টি কলেজ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৯০টি মসজিদ ও মন্দির। কিন্তু এসব খাতে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।জেলার ৮ উপজেলায় সড়কের ক্ষেত্রে ১২৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার পাকা ও ৩৯৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ, ২২৯ কিলোমিটার পাকা ও ৬৯২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ ধ্বংস হয়েছে ১২০ কিলোমিটার, আংশিক বাঁধ নষ্ট হয়েছে ১৫৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। সড়ক ও বাঁধে ক্ষতির অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। এতে ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বন, বিদ্যুৎ খাতের ক্ষতি ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১৮ লাখ টাকার টেলিযোগাযোগ, ১ কোটি ৩ লাখ টাকা মূল্যের ১০টি শিল্প কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সপ্তাহের টানা বর্ষণে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় কোমেনের কারণে ২১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার ৮৮৮টি মৎস্য খামার, ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ২৮৪টি নৌকা ও ট্রলার, ২ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১ হাজার ১০৫টি মাছ ধরার জালের ক্ষতি হয়। এছাড়া ৮ হাজার ৮৯১টি নলকূপ, ১৮ হাজার ২৪৯টি পুকুর ও জলাশয়, ৩৮০ একর পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। তবে তাতেও টাকার পরিমাণ বলা হয়নি।কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, প্রতিবেদনে ৩২৯ কোটি ৪৯ লাখ ৯৪ হাজার ১০০ টাকার ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। যেসব খাতে ক্ষতির পরিমাণ টাকায় উল্লেখ রাখা হয়নি সব মিলে ক্ষতির পরিমাণ ৪ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো সম্পর্কে আমরা উর্ধ্বতন মহলে বিস্তারিত জানিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।সায়ীদ আলমগীর/এসএস/এমআরআই
Advertisement