আইন-আদালত

‘সাজা মওকুফ’ বাদল ফরাজীর মুক্তির একমাত্র পথ

বিনা দোষে ভারতে কারাভোগকারী বাদল ফরাজীর মুক্তির নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটি খারিজ (উত্থাপিত হয়নি মর্মে) করেছেন হাইকোর্ট। ফলে তার মুক্তিতে সামনে আর কোনো আইনি প্রক্রিয়া খোলা থাকল না। শুধুমাত্র ‘সাজা মওকুফ’ চেয়ে করা আবেদনেই মিলতে পারে তার মুক্তি- এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিটকারী আইনজীবী।

Advertisement

বুধবার রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব জাগো নিউজকে এমন তথ্য জানান।

ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব জানান, বাদল ফরাজীর পক্ষে তার আইনজীবীরা বন্দী বিনিময় সংক্রান্ত যেসব কাগজপত্র উপস্থাপন করেছেন তাতে বলা হয়েছে, বাদল ফরাজীকে ভারতের সংশ্লিষ্ট হত্যা মামলার একজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবেই ভারত সরকার তাকে বাংলাদেশ সরকারের নিকট বন্দী বিনিময় চুক্তির আলোকে হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশের বাদল ফরাজী হত্যা মামলার অভিযুক্ত বাদল নয়, এ ধরনের কোনো কারণ রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বাদল ফরাজীর কারামুক্তি চেয়ে রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়েছে। তবে আদালত বাদল ফরাজীকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া তার মুক্তির জন্য অন্য কোনো আইনি প্রক্রিয়া আছে কি না- তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বলেছেন।

Advertisement

তার কারামুক্তির সর্বশেষ প্রক্রিয়া হিসেবে হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, বাদল ফরাজীর মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজা মওকুফের আবেদন করতে হবে। অথবা ভারতীয় সংবিধানের ১৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজা মওকুফের জন্য ভারত সরকারের কাছে তিনি আবেদন করতে পারেন। এছাড়া আর কোনো আইনি প্রক্রিয়া নেই।

এর আগে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বাদল ফরাজী মুক্তির জন্য ভারতের আদালতে রিভিউ করে সমাধান চাইতে পারেন। এছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়া দেখছেন না তিনি।

বুধবার সকালে বাদল ফরাজীর কারামুক্তির বিষয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার কাউছার। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ।

Advertisement

আদালত বলেন, ভুল বিচারে ভারতে কারাভোগকারী বাদল ফরাজীর বিষয়ে সরকারের সব কার্যক্রম ইতিবাচক। এখন হুট করে কোনো রুল বা অবজারভেশন দিলে সেটা হিতে বিপরীত হবে। তার মুক্তিতে সরকারকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে দেয়া উচিত। এরপর আদালত রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় দিল্লির পুলিশ বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল। এ অবস্থায় ওই বছরের ১৩ জুলাই ট্যুরিস্ট ভিসায় বেনাপোল সীমান্ত পার হওয়ার পরপরই ওই বৃদ্ধাকে হত্যা মামলায় বাদল ফরাজীকে গ্রেফতার করে ভারতের পুলিশ। বাদল সিং মনে করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে বিচার শেষে তাকে ওই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ভারতের কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

পরে ভারতীয় একটি বেসরকারি সংস্থা বাদল ফরাজীর ঘটনা জানতে পেরে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। তারা ঢাকার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে ৬ জুলাই দেশে ফেরত এনে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।

এফএইচ/এমএআর/এমএস