ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি রোধে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম। কিন্তু কিছু মানুষের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ইসলাম ধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অধিকার কারো নেই। এই ধর্ম নিয়ে কেউ যেন রাজনীতি না করে, নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Advertisement
আজ (বুধবার) রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে হজ কার্যক্রম-২০১৮ (১৪৩৯ হি.) এর শুভ উদ্বোধন ও হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার হাজিদের সুষ্ঠুভাবে পবিত্র হজ পালন করার সুযোগ করে দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হজ ব্যবস্থাপনার ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে।
হজযাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা হজ পালনে পবিত্র ভূমিতে যাচ্ছেন, দোয়া করবেন যেন আপনাদের খেদমত করার সুযোগ পাই।’
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা যাচ্ছেন আল্লাহর মেহমান হয়ে পবিত্র হজ পালনের জন্য। পবিত্র মক্কা ও মদীনা নগরীতে আপনারা যাবেন নবী করিম (সা.) পবিত্র রওজা পাক জিয়ারত করবেন। আপনারা ভালভাবে হজ পালন করে সুন্দর ও সুস্থভাবে যাতে ফিরে আসতে পারেন সেটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা।
হজযাত্রীদের কাছে দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্য দোয়া কামনার পাশাপাশি ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শাহাদত বরণকারীদের জন্য দোয়া কামনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আপনারা তাদের জন্য একটু দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাদের বেহেশত নসিব করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। শুধু একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি- আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন। কাজেই, এই দেশের মানুষষ দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবে, সুন্দর জীবন পাবে, ভালোভাবে বাঁচার অধিকার পাবে- সেটাই আমার লক্ষ্য। এবং গত ৯ বছরে আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন দেশের কী পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। তার দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে। জাতির পিতা নিজে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম আইন করে দেশে মদ নিষিদ্ধ করেন। ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন। বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের শুরু ও সমাপ্তিতে কুরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের ফলে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের দোড়গোঁড়ায় ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকারই প্রথম সরকারি পর্যায়ে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, মসজিদের ইমামগণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কুরআনের শিক্ষা প্রচারের উদ্দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২২ শত ৭২ কোটি ৪ লক্ষ টাকায় উন্নীত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সারাদেশের সকল উপজেলা পর্যায়ে মডেল মসজিদ কাম ইলামিক সেন্টার নির্মাণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৮৭২২ দশমিক ০৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে ৮০ শতাংশ জায়গাও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এসব মসজিদ নির্মিত হলে সেখানে নামাজ ছাড়াও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রম, হেফজখানা, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি, হজ্জযাত্রীদের প্রশিক্ষণ ও লাশ গোসলের ব্যবস্থা থাকবে।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এ এইচ এম আল মুতাইরী, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি আবদুস সোবহান ভূঁইয়া ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তছলিম প্রমুখ।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ হাজার ৭৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজারসহ মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করবেন। আগামী ১৪ জুলাই প্রথম ফ্লাইট শুরু হবে। চলবে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু হবে ২৭ আগস্ট ও শেষ ফিরতি ফ্লাইট ২৫ সেপ্টেম্বর।
এমইউ/এফএইচএস/এমবিআর/জেআইএম